
শ্রেণি – নবম | বিভাগ – নবম শ্রেণির প্রশ্ন উত্তর | অধ্যায় – বিংশ শতকে ইউরোপ
প্রশ্ন উত্তর আলোচনায় রইল নবম শ্রেণির ইতিহাস বিভাগ পঞ্চম অধ্যায় থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর আলোচনা।
প্রশ্ন – 1929 খ্রিস্টাব্দের অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর – 1929 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। সোভিয়েত রাশিয়া ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই সঙ্কটে প্রভাবিত হয়। এটিই হল অর্থনৈতিক মহামন্দা।
এই মহামন্দার প্রধান কারণগুলি হল
ক) উৎপাদন বৃদ্ধি – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় শিল্পোৎপাদনের হাড় বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়া পণ্যসামগ্রী উদ্বৃত্ত থেকে যায় ফলে শিল্পপতিরা পণ্য উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
খ) কৃষকদের দুর্দশা – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কৃষিপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা ঋণ নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করে কিন্তু যুদ্ধশেষে কৃষিপণ্যের চাহিদা ও মূল্য উভয়েই কমে যাওয়ায় তারা ঋণ পরিশোধে ও পণ্য ক্রয়ে ব্যর্থ হয়।
গ) স্বর্ণসংকট – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশ থেকে পণ্য কিনত না। যারা মার্কিন পণ্য কিনত তারা সোনা দিয়ে পণ্য বিনিময় করত। ইউরোপীয় দেশগুলি সোনা দিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করত। ফলে ইউরোপের অনেক দেশের স্বর্ণভাণ্ডার নিঃশেষিত হয়ে যায়। ফলে সোনা রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার স্বর্ণসংকট দেখা দেয়।
ঘ) শেয়ার বাজারে ধ্বস – আমেরিকার বহু মানুষ শেয়ার বাজারে অর্থ বিনিময় করেছিল। কিন্তু মার্কিন শেয়ার 1929 খ্রিস্টাব্দের 24শে অক্টোবর পতন হতে থাকে। ভীত ও সন্ত্রন্ত শেয়ার কারবারিরা তাদের শেয়ার বিক্রয় করে দিতে থাকলে মার্কিন শেয়ার বাজারের উপর চূড়ান্ত আঘাত নেমে আসে। শেয়ার বাজারের এই মারাত্মক পতন বিশ্বব্যাপী মহামন্দার সূচনা করে।
ঘ) চাহিদা অতিরিক্ত উৎপাদন – অনেকেই মনে করেন চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদনই ছিল অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণ। বিক্রি না হওয়া কৃষিসামগ্রী ও কৃষিপণ্য গুদামজাত হয়ে যায়। বিক্রি না হওয়া কৃষিসামগ্রী ও কৃষিপণ্য গুদামজাত হয়ে পড়ে থেকে বিশ্ববাজারে মদনার প্রসার ঘটিয়েছিল এবং সংকটের জন্ম দিয়েছিল।
ঙ) শুল্ক হার – আমেরিকায় বিদেশি পণ্যের উপর বিপুল পরিমাণ আমদানি শুল্ক চাপানো হলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশও আমেরিকা থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর চড়া শুল্ক চাপায়। ফলে উদ্বৃত্ত সম্পদ বিক্রি না হওয়ায় আমেরিকার অধিকাংশ কলকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় ফলে মন্দা দেখা যায়।
মহামন্দার প্রভাব
সারা বিশ্বে মহামন্দার প্রভাব পড়লেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব
মার্কিন শেয়ার বাজারের পতনের ফলে তিন বছরে পাড়ায় পাঁচ হাজার মার্কিন ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়। শেয়ার বাজারের পতনের প্রভাব পড়ে শিল্প- কারখানার ওপর। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিদেশে ঋণ বন্ধ করে দেয়।
ইউরোপে মহামন্দার প্রভাব
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঋণ দিতঁ, এই ঋণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ইউরোপের দেশগুলি মহামন্দার প্রভাবে আক্রান্ত হয়। খাদ্যের দাম ও কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ার ফলে ফলে পূর্ব ইউরোপের কৃষিনির্ভর দেশগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আমেরিকার বিনিয়োগকারিরা ইউরোপের বাজার থেকে ঋণ তুলে নিতে থাকে। ফলে ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে জার্মানি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, জার্মানির প্রধান ব্যাংক ডার্মস্টাডলার অ্যান্ড ন্যাশনাল বন্ধ হয়ে যায়। ব্রিটেনের মুদ্রার দাম কমে গেলে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ফলত শ্রমিক দলের সরকারের পতন হয়।
বিশ্বের অন্যত্র প্রভাব
ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও দক্ষিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বহু দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মহামন্দার কবলে পড়ে, বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ভারতবর্ষেও মহামন্দার ফলে জিনিষপত্রের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।
নবম শ্রেণির প্রশ্ন উত্তর → বাংলা | ইতিহাস | ভূগোল | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো → WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো → YouTube চ্যানেল
- লাইক করো → Facebook পেইজ
- সাবস্ক্রাইব করো → টেলিগ্রাম চ্যানেল
আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো।