
শ্রেণি – নবম | বিভাগ – নবম শ্রেণির প্রশ্ন উত্তর | অধ্যায় – খেয়া [Kheya]
প্রশ্ন উত্তর আলোচনায় রইল নবম শ্রেণির বাংলা বিভাগ খেয়া কবিতা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর আলোচনা।
প্রশ্ন – খেয়া কবিতার সারাংশ আলোচনা করো।
খেয়া কবিতাটির প্রেক্ষাপট
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘খেয়া’ কবিতাটি ‘চৈতালী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি বাংলা ১৩০২ সালের চৈত্রমাস থেকে ১৩০৩ সালের শ্রাবণ মাসের মাধ্যে লেখা হয়েছে। কবি শিলাইদহ ও পতিসরে বসে বোটে থাকাকালীন কবিতাগুলি রচনা করেন। ‘চৈতালী’ কাব্যগ্রন্থের মুখবন্ধে কবি বলেছেন, স্বল্প পরিসর পতিসর নদীতে বোটে থাকাকালীন নদীর দুই তীরে গ্রাম দুটিকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামবাসীদের সরল জীবনযাত্রার কথাই এই কবিতাটির মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে।
খেয়া কবিতার সারাংশ
‘খেয়া’ অর্থাৎ ছোট নৌকা বা ডিঙি, নদীর দুধারে দুই গ্রামের অবস্থান। নদী, দুই গ্রামের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেছে। আর গ্রামদুটির মধ্যের যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ‘খেয়া’। এক গ্রামের লোক অন্যগ্রামে যায়, আবার অন্যগ্রামের লোক নিজ ঘরে ফিরে আসে খেয়ার মাধ্যামে। সারাদিন এই ‘আসা যাওয়া’ চলতেই থাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরন্তর চলে এই যাওয়া আসা। এই দুই গ্রামের মধ্যে আছে গভীর বন্ধন – পরস্পরের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ। বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন কাজে এপারের লোক অন্য পারে আসে। তারা একে অপরকে গভীর ভাবে চেনে।
এই ছোট গ্রাম দুটি নিজেদের বাইরের জগত সম্পর্কে অজ্ঞ। বাইরের দুনিয়ার কোন খবর এদের কাছে এসে পৌঁছায় না। বাইরের পৃথিবীতে কত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়ে চলেছে, কত রাজ্যের ক্ষমতালোভী মানুষ ক্ষমতার লোভে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে। বাইরের পৃথিবীতে শক্তি আর ক্ষমতার লড়াই এর জন্য প্রতিনিয়ত কত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ঘটে চলেছে। কত নতুন ইতিহাস প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে। কত যুদ্ধ প্রতিনিয়ত বহির্বিশ্বে ঘটে চলেছে। কোন দেশ যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছে, আবার কোন দেশের মাথায় উঠছে বিজয়ীর মুকুট।
আরো পড়ো → খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর আলোচনা
ক্ষমতা, দম্ভ, কোন বিষয়ের মত পার্থক্য, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা, অপরকে ক্ষমতা চ্যুত করে তার সম্পদ গ্রাস করার ইচ্ছেই অবতারণা করে রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধের। সেই যুদ্ধের ফলে কেউ হয় ক্ষমতা চ্যুত, যা কবির ভাষায় ‘মুকুট টুটে’। আবার কোন দেশ বিজয়ী হয়। বিজয়ী দেশ রক্ষা করতে পারে তার নিজ সম্পদ, আবার পরাজিত দেশের সম্পদ রাশিও সে করায়ত্ত করে সে আরও সম্পদশালী হয়ে ওঠে, যা কবির ভাষায় ‘সোনার মুকুট ফুটে’। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক যুগে সর্বদা নতুন নতুন আবিষ্কার হয়ে চলেছে। বিজ্ঞানের জগতে ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত নানা কর্মযজ্ঞ। সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করার লক্ষ্যে সদা সর্বদা বহু কিছু আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে। সভ্যতার এই অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে যা কিছু আবিষ্কৃত হচ্ছে তার ফলে যে সব সময় ভালো হয় তা নয়, তার কিছু কুফলও আছে। সুধার সঙ্গে ‘হলাহলও’ থাকে।
আমরা পুরাণের বর্ণনায় দেখেছি, অমৃতের আশায় যখন দেবতা ও অসুরেরা সমুদ্র মন্থন করেছিলেন, তখন অমৃতের আগে বিষ বা হলাহল উঠেছিল সমুদ্র থেকে। তেমনি সভ্যতার উত্থানের জন্যে বহু আবিস্কার হয়েছে, যে সমস্ত যন্ত্র বা উপাদান যা সভ্যাতাকে উন্নত করেছে তার কিছু কিছু কুপ্রভাব বিশ্বে রয়ে গেছে। এটিই কবির ভাষায় ‘হলাহল’।
বহির্বিশ্বের খবর, সভ্যতার অগ্রগতি, ইতিহাসে ক্ষমতার হস্তান্তর কোন কিছুই নদীর দুই তীরের মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে না। কারণ তাদের কাছে পরিবর্তনের কোন খবরই পৌঁছায় না। এই দুই গ্রাম শুধু পরস্পরকেই চেনে। দুই গ্রামের মাধ্যেই ঘটে তার সকল আদান প্রদান, ভাব বিনিময়, যাতায়াত। তাদের সরল জীবনযাত্রা একই ভাবে প্রবাহিত হয়। তাদের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের যোগাযোগের মাধ্যম হল খেয়া। যা চিরদিন দুটি গ্রামের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে আজীবন।
নবম শ্রেণির প্রশ্ন উত্তর → বাংলা | ইতিহাস | ভূগোল | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো → WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো → YouTube চ্যানেল
- লাইক করো → Facebook পেইজ
- সাবস্ক্রাইব করো → টেলিগ্রাম চ্যানেল
আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো।