
শ্রেণি – দশম | বিভাগ – দশম শ্রেণির প্রশ্ন উত্তর | অধ্যায় – বহুরূপী
প্রশ্ন উত্তর আলোচনায় রইল দশম শ্রেণির বাংলা গল্প বহুরূপী থেকে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর আলোচনা।
প্রশ্ন – বহুরূপী গল্প অনুযায়ী হরিদার চরিত্রের বিশ্লেষণ করো।
বহুরূপী গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা, তাঁর চরিত্র বিশ্লেষণ করলে আমরা তাঁর চরিত্রের যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ্য করি, সেগুলি আমরা নীচে একে একে আলোচনা করবো,
শিল্পীসত্তা
হরিদা একজন প্রকৃত শিল্পী। তিনি তাঁর পেশার খাতিরে যতবার বিভিন্ন রূপে নিজেকে সাজিয়েছেন, তা হয়েছে নিখুঁত। আমরা গল্পে দেখি, তিনি কখনো বাইজী সেজে রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, আবার কখনো বাসস্ট্যান্ডে পাগল সেজে পাথর ছোঁড়ার ভান করেছেন, এমনকি আমবাগানে পুলিশ সেজে ছোট ছেলেদের ধরেছেন। হরিদা তাঁর শিল্পীসত্তার মাধ্যমে প্রতিবারই মানুষজনকে অবাক করে দিয়েছেন। একজন প্রকৃত শিল্পীর প্রধান বৈশিষ্ট্য তাঁর শিল্পের মাধ্যমে অপরকে আনন্দ দেওয়া, সেই দিক থেকে বিচার করলে হরিদার শিল্পীসত্তার প্রকাশ বারবার ঘটেছে।
সততা
গল্পে আমরা জেনেছি হরিদা ভীষণই গরীব, অভাব তাঁর নিত্যদিনের সাথী। কিন্তু, অভাব হরিদাকে অসৎ করে তুলতে পারেনি। তাই আমরা গল্পে দেখি পুলিশ সেজে মাস্টারমশাইয়ের কাছে ঘুষ নিলেও পরে সেই মাস্টারমশাইয়ের কাছে হরিদা ক্ষমা চেয়ে নেন। আবার বিরাগী সেজে জগদীশ বাবুর কাছে গেলে তিনি যে মোটা প্রণামী দেন তা নিতে হরিদা অস্বীকার করেন।
পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা
হরিদা তাঁর বৈচিত্র্যময় বহুরূপীর পেশাকে ভালোবাসেন। পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা ফুটে ওঠে তাঁর প্রতি পদক্ষেপে। তাই ‘অভাবের তাড়নায় তাড়িত’ হরিদা বিরাগী রূপে অভিনয়ের সময় একশত টাকা প্রণামীও প্রত্যাখান করেন।
একরোখা
হরিদা একরোখা! গল্পে লেখক বলছেন “হরিদার প্রাণের মধ্যেই যেন একটা বাধা আছে”। দরিদ্র হরিদার দিন চলে না, কিন্তু দশটা পাঁচটার একঘেয়ে কাজ হরিদা করতে পারেন না। কারণ নিয়ম করে কাজ করতে হরিদার অনিহা, তাই তিনি অভাবের সাথে নির্বিরোধে বন্ধুত্ব করে নেন, কিন্তু স্বাভাবিক রোজগারের চেষ্টা করেন না। হয়তো শিল্পীরা এইরকমই একরোখা হন, তাদের কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন হচ্ছে কিনা তা নিয়ে তারা ভাবিত হন না। যেমন আমরা জার্মান লেখক ফ্রান্ৎস কাফকার কথা উল্লেখ করতে পারি। কাফকা তাঁর জীবিতকালে তাঁর লেখার জন্য সম্মান পাননি কিন্তু তাঁর কাজ থেমে থাকেনি। তাঁর মৃত্যুর পর কাফকার লেখা সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দেয়।
কল্পনাবিলাসিতা
হরিদার মধ্যে বাস্তববোধের অভাব লক্ষ্য করা যায়। ‘হরিদার উনানের হাঁড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না’ – কিন্তু হরিদা নির্বিকার। ‘একঘেয়ে অভাবটাকে সহ্য করতে হরিদার আপত্তি নেই, একঘেয়ে কাজ করতে ভয়ানক আপত্তি’। হরিদার শিল্পী মন বৈচিত্র্যতার মধ্যে জীবনের রসদ খোঁজে, কিন্তু জীবন যে বড় নির্মম। অদৃষ্ট হরিদার এই ভুলগুলো ক্ষমা করে না, তাই অভাব তাকে মাঝে মাঝেই উপোস করিয়ে রাখে। কোনোরকমভাবে কষ্টের মধ্যে তাঁর দিন কেটে যায়।
আরো পড়ো → ইতিহাসচর্চায় উপাদান হিসাবে বঙ্গদর্শনের গুরুত্ব
WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো → WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো → YouTube চ্যানেল
- লাইক করো → Facebook পেইজ
- সাবস্ক্রাইব করো → টেলিগ্রাম চ্যানেল
আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।