শ্রেণি – নবম | বিভাগ – নবম শ্রেণির প্রশ্ন উত্তর | অধ্যায় – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ
প্রশ্ন উত্তর আলোচনায় রইল নবম শ্রেণির ইতিহাস বিভাগ থেকে দ্বিতীয় অধ্যায়ের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর আলোচনা।
প্রশ্নঃ নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ এবং রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতার কারণ।
উত্তরঃ ১৮১০ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া, নেপোলিয়ন প্রণীত মহাদেশীয় ব্যবস্থা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাশিয়ার বন্দরগুলি ব্রিটিশদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। ফ্রান্স সম্রাট এই অপমানের বদলা হিসাবে রাশিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।
রাশিয়া আক্রমণ
১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে ২৬শে জুন প্রায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার সেনা দিয়ে নির্মিত নেপোলিয়নের ‘গ্র্যান্ড আর্মি’ টিলসিট থেকে মস্কোর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নেপোলিয়নের গ্র্যান্ড আর্মির তুলনায় রাশিয়ার সেনার সংখ্যা ছিল অনেকটাই কম। ফলে রাশিয়ার সেনাবাহিনী প্রথম থেকে মুখোমুখি সংঘর্ষে না জড়িয়ে মস্কোর দিকে পিছু হটতে থাকে। এই পিছু হটার সময়ে পথের সমস্ত জনপদ, রাস্তা, সেতু, ফসল নষ্ট করে,এমনকি তারা পানীয় জলেও বিষ মিশিয়ে দেয়। এই যুদ্ধ নীতি ‘পোড়ামাটির নীতি’ হিসাবে খ্যাত।
বোরোডিনোর যুদ্ধ
ক্রমশ পিছু হটে অবশেষে ৭ই সেপ্টেম্বর রুশ বাহিনী মস্কো থেকে মাত্র ৭৫ মাইল দূরে বোরোডিনো নামক স্থানে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়। এই ব্যাপক রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধে ফরাসী সেনা জয়লাভ করলেও, তাদের সেনা ও রুশদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই যুদ্ধে হেরে রুশ বাহিনী মস্কোর পেছনে চলে যায়।
মস্কো বিজয়
আরো এক সপ্তাহ পরে কার্যত জনশূন্য রাজধানী মস্কো শহর নেপোলিয়ন দখল করেন। রুশরা মস্কো শহর ছাড়ার আগে গোটা শহরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, ফলে নেপোলিয়নের বাহিনীর বাসস্থানের অভাব ঘটে। এর পাশাপাশি সেই বছর প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে শীতের আগমন ঘটে, ব্যাপক ঠাণ্ডায় প্রচুর সেনাও মারা যায়।
নেপোলিয়নের প্রত্যাবর্তন
এই অবস্থাতেও নেপোলিয়ন জারের সন্ধির জন্য পাঁচ সপ্তাহ অপেক্ষা করেন। কিন্তু জারের তরফে সন্ধির কোন লক্ষণ না দেখে মস্কো ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে প্রত্যাবর্তনের সময়ে প্রবল ঠাণ্ডা, খাদ্যে ও পানীয়ের অভাব, অজানা জ্বর এবং রুশ সেনার আক্রমণে নেপোলিয়নের সেনা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। প্রায় সাত লাখ সেনা সমৃদ্ধ বিপুল গ্র্যান্ড আর্মি মাত্র তিরিশ হাজার সেনা সমেত দেশে ফিরে আসে।
রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতার কারণ
নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান ব্যর্থ হবার একাধিক কারণ ছিল।
প্রথমত, নেপোলিয়নের বাহিনী ছিল ভাড়া করা অনভিজ্ঞ সেনায় সমৃদ্ধ। ফলে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের লেশ মাত্র ছিল না।
দ্বিতীয়ত – অযাচিত ভাবে শত্রুর সংখ্যা বৃদ্ধি করা। নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণের সময়ে ব্রিটিশ, স্পেন, পর্তুগাল ইত্যাদি দেশের সাথে ক্রমাগত সংঘর্ষ চলছিল। আপাত দৃষ্টিতে রাশিয়ার সাথে সেই সময়ে তাঁর যুদ্ধগত বিবাদ ছিলনা। ফলে অন্য দেশগুলির সাথে যুদ্ধরত অবস্থায়, রাশিয়া আক্রমণ ফ্রান্সের অবস্থা অস্থিতিশীল হয়।
তৃতীয়ত – রুশ বাহিনীর কঠিন লড়াই। রুশ বাহিনীর তুলনায় নেপোলিয়নের বাহিনী সংখ্যায় বিপুল হলেও, অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে রুশ বাহিনী অনেকটাই এগিয়েছিল। বিশেষত রুশ সেনাপতি কুটলভের (Kutuzov) পোড়ামাটির নীতি এবং জারের অনমনীয় মনোভাব, নেপোলিয়নকে প্রত্যাবর্তনের জন্য বাধ্য করে।
চতুর্থত – প্রতিকূল আবহাওয়া। অবিশ্বাস্য ভাবে সেই বছর প্রায় ছয় সপ্তাহ আগেই রাশিয়ায় শীত প্রবেশ করে। রাশিয়ার প্রবল শৈত্য মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা এবং প্রস্তুতি কোনটাই নেপোলিয়নের বাহিনীর ছিল না। ফলে অযাচিত ভাবে বহু সেনার মৃত্যু হয়।
আরো পড়ো – নবম শ্রেণির ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাবার জন্য –
- ফলো করো → WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো → YouTube চ্যানেল
- লাইক করো → Facebook পেইজ
- সাবস্ক্রাইব করো → টেলিগ্রাম চ্যানেল
আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
