শ্রেণি – দশম | বিভাগ – জীবনবিজ্ঞান| অধ্যায় – উদ্ভিদের চলন | Udvider Cholon (Chapter 1)
এই পর্বে রইল দশম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম উপ অধ্যায় – উদ্ভিদের চলন থেকে কয়েকটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন – উত্তর (SAQ) এবং দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন – উত্তর (LA)।
Table of Contents
দুটি বা তিনটি বাক্যে উত্তর দাও। (SAQ)
১। বাহ্যিক উদ্দীপক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক কাকে বলে?
উত্তর- বাহ্যিক উদ্দীপকঃ এই উদ্দীপক বাইরে থেকে জীবদেহকে উদ্দীপিত করে। যেমন- যেকোন লতানে গাছ (যেমন লাউ, কুমড়ো, মটর) কোন শক্ত অবলম্বন পেলে তাকে জড়িয়ে বেড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে এই শক্ত অবলম্বনই হল বাহ্যিক উদ্দীপক।
অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকঃ এই উদ্দীপক উদ্ভিদের দেহের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়। যেমন- অক্সিন হরমোনের প্রভাবে গাছের কাণ্ড বৃদ্ধি পায়। হরমোন হল অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।
২। সংবেদনশীলতা বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর- প্রাণীদের মতো উদ্ভিদরাও পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তন শনাক্ত করে, পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাযথ সাড়া প্রদান করে। এই সাড়াপ্রদানের ক্ষমতা বা বিশেষ ধর্মকে বলা হয় সংবেদনশীলতা।
যেমন- পতঙ্গভূক উদ্ভিদ ড্রসেরার (সূর্যশিশির) উপর পতঙ্গ এসে বসলে ঐ উদ্ভিদ তা ঠিক বুঝতে পারে এবং ধীরে ধীরে তার কর্ষিকা দিয়ে সেই পতঙ্গকে গ্রাস করে নেয়। এ ক্ষেত্রে পতঙ্গ হল উদ্দীপক আর ধীরে ধীরে কর্ষিকা দিয়ে ঐ পতঙ্গকে জড়িয়ে ধরা হল, উদ্দীপনা প্রকাশ করা বা উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া। উত্তেজনায় এই সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা বা ধর্মই হল সংবেদনশীলতা।
পড়া মনে রাখার সেরা উপায়! ↓
৩। চলন বলতে কী বোঝ?
উত্তর- যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ এক স্থানে স্থির থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বা বিভিন্ন উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গকে সঞ্চালিত করে, তাকে চলন বলে।
৪। চলনের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর- উদ্ভিদ গমন করতে সক্ষম নয় তাই উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া, বৃদ্ধির জন্য ও বিভিন্ন ক্রিয়া যেমন- সালোকসংশ্লেষ ইত্যাদি সম্পাদনের জন্য উদ্ভিদের চলন হয়।
বৃদ্ধির জন্য– উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য চলন হয়। কাণ্ডের বৃদ্ধি হল অভিকর্ষ প্রতিকূলবর্তী চলন এবং মূলের বৃদ্ধি অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী চলন।
উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া– সূর্য, জল ইত্যাদি হল প্রধান উদ্দীপক। এদের প্রভাবেই উদ্ভিদ সাড়া প্রদান করে। যেমন- সূর্যমুখী ফুলের সূর্যের দিকে মুখ করে থাকা, মূলের জলের দিকে অগ্রসর, কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখার সূর্যের দিকে বেঁকে যাওয়া। এছাড়াও স্পর্শ, আলোর তীব্রতা ও গতিপথ ইত্যাদিও উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। যেমন- লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ করলে বুজে যায়।
এছাড়াও সালোকসংশ্লেষের জন্য সূর্যের আলো প্রয়োজন তাই পাতা সূর্যের আলোর সঙ্গে তির্যক ভাবে থাকে।
৫। উদ্ভিদ কীভাবে সাড়াপ্রদান করে?
উত্তর- উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদ এক স্থানে আবদ্ধ থেকে উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রতা প্রদানের দ্বারা বা শাখা প্রশাখা সঞ্চালনের মাধ্যমে সাড়াপ্রদান করে। যেমন- মূলের জলের দিকে বেঁকে যাওয়া, এখানে জল উদ্দীপক আর মূলের বেঁকে যাওয়া হল উদ্দীপকে সাড়া দেওয়া। মূলের মতই কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখার সূর্যের দিকে বেঁকে যাওয়া, এখানে সূর্য উদ্দীপক আর কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখার বেঁকে যাওয়া হল উদ্দীপকে সাড়া দেওয়া। এইভাবে উদ্ভিদ বিভিন্ন অঙ্গের বক্রতা প্রদান করে সাড়া দেয়।
৬। ট্যাকটিক চলন কাকে বলে? ফোটোট্যাকটিক চলন বলতে কী বোঝ?
উত্তর- যখন বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদ দেহের স্থান পরিবর্তিত হয়। তখন তাকে ট্যাকটিক চলন বলে। ক্ল্যামাইডোমোনাসে এই প্রকার চলন দেখা যায়। যখন বহিস্থ উদ্দীপক আলোকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদ দেহের স্থান পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে ফোটোট্যাকটিক চলন বলে।
৭। স্বতঃস্ফূর্ত চলন কাকে বলে?
উত্তর- স্বতঃস্ফূর্ত চলন- এই প্রকার চলন কোন প্রকার উদ্দীপক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না এবং এই প্রকার চলন ইনহেরেন্ট অর্থাৎ জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই প্রকার চলনকে স্বতঃস্ফূর্ত চলন বলে। যেমন, বনচাঁড়ালের রসস্ফীতি জনিত প্রকরণ চলন।
৮। আবিষ্ট চলন কাকে বলে?
যে চলন উদ্দীপক (উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে বা তীব্রতা অনুসারে) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে আবিষ্ট চলন বলে। যেমন- উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে নিয়ন্ত্রিত দিগনির্ণীত চলন বা ট্রপিক চলন। আলোকের অভিমুখে উদ্ভিদ অঙ্গের (কান্ডের) বক্রচলন।
৯। থার্মোন্যাস্টিক চলন বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর- ‘থার্মো’ কথার অর্থ উষ্ণতা। উষ্ণতার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে উদ্ভিদের যে বক্রচলন হয় তাকে থার্মোন্যাস্টিক বা তাপব্যাপ্তি চলন বলা হয়। যেমন উদাহরণ হিসাবে বলা যায় টিউলিপ ফুল সাধারণ উষ্ণতায় ফোটে কিন্তু উষ্ণতা হ্রাস পেলে তা আবার বন্ধ হয়ে যায়।
১০। নিক্টিন্যাস্টি বা আলোক তাপব্যাপ্তি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর- যখন তাপ ও আলো উভয়ের প্রভাবে অর্থাৎ ফোটোন্যাস্টি ও থার্মোন্যাস্টি উভয় চলনের সমন্বয়ে যে চলন ঘটে। তাকে নিকটিন্যাস্টি বা আলোক তাপব্যাপ্তি বলে। যেমন তাপ আর আলোর প্রভাবে দিনের বেলা বাবলা, শিরীষ প্রভৃতি গাছের পাতা খুলে যায় আর রাতের বেলা আলো আর তাপের অভাবে এদের পাতা বন্ধ হয়ে যায়।
আরো পড়ো → উদ্ভিদ চলন অধ্যায়ের অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন – উত্তর
দীর্ঘ উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন (LA)
১। উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা প্রমাণের ক্ষেত্রে জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান কী? বৃদ্ধিজ ও প্রকরণ চলন কাকে বলে?
উত্তর- আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা আছে একথাটি প্রমাণ করেছিলেন বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে। রেজোনেন রেকর্ডার, ক্রেসক্রোগ্রাফ, ইলেকট্রিক প্রোপ ইত্যাদির দ্বারা উদ্দীপক প্রয়োগ করে উদ্ভিদদেহে কি কি পরিবর্তন হয় তা লক্ষ্য করেন। ত্রিফলক বনচাঁড়াল গাছে রসস্ফীতির তারতম্যের জন্য বনচাঁড়ালের ক্ষুদ্র বা ছোট পত্রক দুটি ওঠা নামা করে। জগদীশ চন্দ্র বসু দেখান যে স্পন্দন মুক্ত অবস্থায় বনচাঁড়ালের পত্রবৃন্তক কেটে দিলে স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু যদি উপাধান (Pulvinus)-এ যদি উদ্দীপক হিসাবে তড়িৎ চালনা করা হয় তবে পুনরায় স্পন্দন উদ্দীপনা হিসাবে দেখতে পাওয়া যায়।
স্বাভাবিক অবস্থায় লজ্জাবতী গাছকে স্পর্শ করলে পাতাগুলি বুজে যায়। স্পর্শ করার ফলে আয়নের বিন্যাসের তারতম্য হয় ফলে রসস্ফীতির পরিবর্তন হয়। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু দেখান যে লজ্জাবতীর পাতার উপাধানে বৈদ্যুতিক উদ্দীপক পাঠালে একই ধরণের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। এইভাবে এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে জগদীশ চন্দ্র বসু দেখান যে প্রাণীদের মতো উদ্ভিদও সাড়া প্রদান করে।
বৃদ্ধিজ চলন -এই প্রকার চলন উদ্ভিদের বৃদ্ধিজনিত কারণে হয়। যেমন ফুল, পাতা, বৃতি ইত্যাদির উপরের তল এবং নিন্মতলের অসম বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে।
প্রকরণ চলন – কোশের রসস্ফীতির তারতম্যের জন্য উদ্ভিদের পরিণত অংশে যে চলন লক্ষ্য করা যায়, তাকে প্রকরণ চলন বলা হয়। এই প্রকার চলন ত্রি-ফলক যুক্ত বনচাঁড়ালে লক্ষ্য করা যায়। একটি বড় পাতার তলায় দুটি ছোট পত্রক থাকে, তারা ক্রমান্বয়ে ওঠা-নামা করতে থাকে। তবে এই প্রকার চলন কেবল মাত্র দিনের বেলাই দেখতে পাওয়া যায়।
UPDATE:মাধ্যমিক পরীক্ষার ভীতি কাটাবার সেরা উপায়↓
২। ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর- ট্রপিক চলনের বৈশিষ্ট্য-
১) এটি উদ্ভিদদেহের একপ্রকার বক্রচলন
২) এটি বহিস্থ উদ্দীপক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চলন
৩) এটি উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে নিয়ন্ত্রিত চলন
৪) এই চলন উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলে যেমন মূল, কান্ড, শাখা-প্রশাখা ইত্যাদিতে লক্ষ্য করা যায়।
ন্যাস্টিক চলনের বৈশিষ্ট্য-
১) এটি উদ্ভিদদেহের একপ্রকার বক্রচলন অর্থাৎ উদ্ভিদ অঙ্গের বক্রতা সৃষ্টির মাধ্যমে ঘটে।
২) বহিস্থ উদ্দীপক যেমন আলো, উষ্ণতা, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি দ্বারা এই চলন নিয়ন্ত্রিত হয়।
৩) এই চলন উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চলন
আরো পড়ো → ইতিহাসের ধারণা প্রশ্ন উত্তর
WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো → WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো → YouTube চ্যানেল
- লাইক করো → Facebook পেইজ
- সাবস্ক্রাইব করো → টেলিগ্রাম চ্যানেল
আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।