শ্রেণি – দশম | বিভাগ – জীবনবিজ্ঞান| অধ্যায় – উদ্ভিদ হরমোন| Udvid Hormone proshno uttor (Chapter 2)
এই পর্বে রইল দশম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় অধ্যায় – উদ্ভিদ হরমোন থেকে কয়েকটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – উত্তর আলোচনা।
Table of Contents
সঠিক উত্তর নির্বাচন করো। (MCQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 1]
1। উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে –
ক) সাইটোকাইনিন খ) ফ্লোরিজেন গ) অক্সিন ঘ) ইথিলিন
উত্তর – উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে গ) অক্সিন।
2। সাইটোকাইনিন যে হরমোনটির উপস্থিতিতে ভালো কাজ করে, সেটি হল–
ক) জিব্বেরেলিন খ) ইথিলিন গ) অক্সিন ঘ) কোনোটিই নয়।
উত্তর – সাইটোকাইনিন যে হরমোনটির উপস্থিতিতে ভালো কাজ করে, সেটি হল গ) অক্সিন।
3। জিব্বেরেলিনের প্রবাহ –
ক) ঊর্ধ্বমুখী খ) নিম্নমুখী গ) ঊর্ধ্ব ও নিম্ন উভয়মুখী ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর-জিব্বেরেলিনের প্রবাহ গ) ঊর্ধ্ব ও নিম্ন উভয়মুখী।
4। গাছ থেকে পাতা বিচ্ছিন্ন করার বহুদিন পর পর্যন্ত পাতাটিকে সবুজ রাখতে কার্যকরী হরমোনটি হল –
ক) অক্সিন খ) GA গ) সাইটোকাইনিন ঘ) IPA
উত্তর- গাছ থেকে পাতা বিচ্ছিন্ন করার বহুদিন পর পর্যন্ত পাতাটিকে সবুজ রাখতে কার্যকরী হরমোনটি হল গ) সাইটোকাইনিন।
5। কৃষিক্ষেত্রে আগাছা দমনে সাহায্যকারী কৃত্রিম হরমোন হল–
ক) কৃত্রিম অক্সিন খ) অক্সিন গ) ইথিলিন ঘ) জিব্বেরেলিন
উত্তর-কৃষিক্ষেত্রে আগাছা দমনে সাহায্যকারী কৃত্রিম হরমোন হল–ক) কৃত্রিম অক্সিন
পড়া মনে রাখার সেরা উপায়! ↓
6। উদ্ভিদের জরা বিলম্বকারী ফাইটোহরমোনটি হল-
ক) অক্সিন খ) জিব্বেরেলিন গ) সাইটোকাইনিন ঘ) ইথিলিন
উত্তর- উদ্ভিদের জরা বিলম্বকারী ফাইটোহরমোনটি হল গ) সাইটোকাইনিন।
7। নাইট্রোজেনধর্মী একটি আম্লিক উদ্ভিদ হরমোন হল-
ক) জিব্বারেলিন খ) সাইটোকাইনিন গ) অক্সিন ঘ) ইথিলিন
উত্তর- নাইট্রোজেনধর্মী একটি আম্লিক উদ্ভিদ হরমোন হল গ) অক্সিন।
8।উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে –
ক) সাইটোকাইনিন খ) অক্সিন গ) ইথিলিন ঘ) জিব্বেরেলিন
উত্তর- উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ক) সাইটোকাইনিন।
9। ফল পাকানোর প্রয়োজনীয় হরমোন হল-
(ক) অক্সিন ( খ) জিব্বেরেলিন (গ) ইথিলিন (ঘ) NAA
উত্তর- ফল পাকানোর প্রয়োজনীয় হরমোন হল (গ) ইথিলিন।
শূন্যস্থান পূরণ করে সম্পূর্ণ বাক্য লেখ।
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 1]
1। প্রথম আবিষ্কৃত উদ্ভিদ হরমোনটি হল _______।
উত্তর- প্রথম আবিষ্কৃত উদ্ভিদ হরমোনটি হল অক্সিন।
2। উইডিসাইড হরমোন বলা হয় কৃত্রিম _______ কে।
উত্তর-উইডিসাইড হরমোন বলা হয় কৃত্রিম অক্সিন কে।
3। বীজের সুপ্তাবস্থা দূরীকরণে সাহায্য করে ______।
উত্তর-বীজের সুপ্তাবস্থা দূরীকরণে সাহায্য করে জিব্বেরেলিন।
4। জিব্বেরেলিন _________ ভাজক কলাকোশের বিভাজন ঘটিয়ে কান্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে।
উত্তর-জিব্বেরেলিন নিবেশিত ভাজক কলাকোশের বিভাজন ঘটিয়ে কান্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে।
5। ________ হরমোন উদ্ভিদের ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।
উত্তর- ফ্লোরিজেন হরমোন উদ্ভিদের ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ো → ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন – উত্তর
একটি বাক্যে উত্তর দাও। (VSAQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 1]
1। উদ্ভিদ হরমোনের রাসায়নিক প্রকৃতি কীরূপ?
উত্তর- উদ্ভিদ হরমোন সাধারণত ক্ষারীয় বা অম্ল জৈব পদার্থ হয়।
2। অক্সিনের রাসায়নিক নাম কী?
উত্তর- অক্সিনের রাসায়নিক নাম হল ইন্ডোল অ্যাসেটিক অ্যাসিড।
3। অক্সিনের রাসায়নিক সংকেত কী?
উত্তর- অক্সিনের রাসায়নিক সংকেত হল (C10H9O2N)।
4। উদ্ভিদের অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কোন্ হরমোন?
উত্তর- উদ্ভিদের অগ্র বৃদ্ধিতে সাহায্য করে অক্সিন হরমোন ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সাইটোকাইনিন হরমোন।
5। প্রধান জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক সংকেত কী?
উত্তর- প্রধান জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক সংকেত (C19H22O6)।
6। জিব্বেরেলিন কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর-জিব্বেরেলিন আবিষ্কার করেন কুরোশোয়া।
7। পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কোন্ হরমোন?
উত্তর-পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে জিব্বেরেলিন হরমোন।
8। অ্যান্টিজিব্বেরেলিন কাকে বলে?
উত্তর- অ্যাবসেসিক অ্যাসিডকে অ্যান্টিজিব্বেরেলিন বলা হয়।
9। জরা রোধ করে এমন একটি উদ্ভিদ হরমোনের লেখো।
উত্তর- জরা রোধ করে এমন একটি উদ্ভিদ হরমোন হল সাইটোকাইনিন।
১০। একটি গ্যাসীয় হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর- একটি গ্যাসীয় হরমোনের নাম হল ইথিলিন।
আরো পড়ো → অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন – উত্তর
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 2]
1। উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর – উদ্ভিদ হরমোন, উদ্ভিদ দেহের বিশেষ জৈবনিক ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন- উদ্ভিদের বৃদ্ধি (অগ্রমুকুল ও পার্শ্বীয় মুকুল), ফুলের স্পরিস্ফুটন, অঙ্কুরোদগম, বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ ইত্যাদি । এছাড়াও উদ্ভিদ হরমোন অক্সিন ট্রপিক চলন (জিওট্রপিক ও ফটোট্রপিক চলন) নিয়ন্ত্রণ করে। এখন বিভিন্ন কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করে খর্ব উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা, আগাছা দমন, বীজহীন ফল উৎপাদন, অপরিণত ফলের মোচন রোধ ইত্যাদি করা হয়।
2। হরমোনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর- হরমোনের বৈশিষ্ট্য হল-
i) উৎস- প্রাণী হরমোন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এবংউদ্ভিদ হরমোন সজীবকোশে সংশ্লেষিত হয়, যেমন- উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চল অর্থাৎ মূল, কাণ্ডের অগ্রস্থ ভাজক কলা ইত্যাদি।
ii) প্রকৃতি – উদ্ভিদ হরমোন সাধারণত অম্ল বা ক্ষারীয় জৈব পদার্থ হয়। প্রাণী হরমোন অ্যামাইনো অ্যাসিড, পেপটাইড, স্টেরয়েড ইত্যাদি প্রকৃতির হয়।
iii) কাজ- উভয় হরমোনই কোশের বিপাক ক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে।
iv) পরিবহন- দেহতরলের মাধ্যমে উৎপত্তিস্থল থেকে হরমোন দূরে পরিবাহিত হয়।
v) পরিণতি – উদ্ভিদ ও প্রাণী হরমোন উভয়ই হরমোনই ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
3। অক্সিনের প্রধান দুটি কাজ লেখো।
উত্তর- অক্সিনের প্রধান দুটি কাজ হল –
ক) কোশ বিভাজন ও কোশের আকার বৃদ্ধি
অক্সিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলে কোশ বিভাজন ত্বরান্বিত করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটানো। এছাড়া অক্সিন সেলুলোজ জাতীয় উৎসেচকের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোশপ্রাচীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে, ফলে কোশ আয়তনে বৃদ্ধি পায়।
খ) মূলের সৃষ্টি ও বৃদ্ধি
– শাখা কলমের জন্যে কর্তিত উদ্ভিদ কান্ডের শেষ অংশে অক্সিন প্রয়োগ করলে সেখান থেকে অস্থানিক মূল নির্গত হয়।
– অক্সিন স্বল্প ঘনত্বে মূলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এখানে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন অধিক মাত্রায় অক্সিন মূলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
4। জিব্বেরেলিনের দুটি উৎস ও দুটি কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – জিব্বেরেলিনের দুটি উৎস – জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের পরিণত বীজে ও বীজপত্রে, পাতার ভাজক কলায় পাওয়া যায়।
দুটি কাজ হল-
ক) উদ্ভিদের জিনগত খর্বতা দূরীকরণ
কোন উদ্ভিদের জিনগত খর্বতা জিব্বেরেলিন দূর করতে পারে। জিব্বারেলিন দুটি পর্বের মধ্যবর্তী স্থানে মাইটোসিস কোশ বিভাজন দ্বারা কোশের স্ংখ্যা বৃদ্ধি করে, এবং কোশের আয়তন বৃদ্ধি করে ফলে পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। এই ভাবে জিব্বেরেলিন উদ্ভিদ কান্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। ফলে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয়।
খ) ফলের আকার বৃদ্ধি
জিব্বেরেলিনের প্রয়োগে আঙুর, আ্পেল, ন্যাসপাতি প্রভৃতি ফলের ফল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ফলের আকারও বৃদ্ধি পায়। যেমন GA3 প্রয়োগে আঙুরের বৃন্তের বৃদ্ধি ঘটে ফলে আঙুরের থোকা বড় হয় (অর্থাৎ আঙুরের থোকায় আঙুরের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে) আবার আঙুরের আকারও বৃদ্ধি পায়।
5। সাইটোকাইনিনের উৎস ও দুটি কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – সাইটোকাইনিনের উৎস হল- উদ্ভিদের অপরিণত সস্য, অঙ্কুরিত বীজ এবং যে সমস্ত উদ্ভিদ অঙ্গ দ্রুত বিভাজিত হয় সেই সব অংশে সাইটোকাইনিন লক্ষ্য করা যায়।
সাইটোকাইনিনের কাজ হল-
ক) কোশবিভাজন সংগঠন
সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের কোশচক্রের S দশায় DNA সংশ্লেষ ঘটিয়ে মাইটোসিস কোশবিভাজন করতে সাহায্য করে, অর্থাৎ কোশবিভাজনকে ত্বরান্বিত করে।
খ) পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি
সাইটোকাইনিন অগ্রস্থ প্রকটতার বিপরীত কাজ করে। সাইটোকাইনিন অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি রোধ করে এবং পার্শ্বীয় বা কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে (অক্সিনের বিপরীত ক্রিয়া)। এর ফলে উদ্ভিদের শাখা-প্রশাখার বৃদ্ধি ঘটে এবং উদ্ভিদ ঝোপের মত আকৃতি লাভ করে।
UPDATE:মাধ্যমিক পরীক্ষার ভীতি কাটাবার সেরা উপায়↓
6। কৃত্রিম হরমোন কাকে বলে?
উত্তর – প্রাকৃতিক হরমোনের মত কার্যক্ষমতা সম্পন্ন যে হরমোনগুলি রসায়নাগারে প্রস্তুত করা হয়, তাদের কৃত্রিম হরমোন বলে। এরা উদ্ভিদ দেহে সংশ্লেষিত হয় না বলে, এরা প্রাকৃতিক নয়। যেমন- ন্যাপথা অ্যাসেটিক অ্যাসিড (অক্সিন), কাইনেটিন (সাইটোকাইনিন) ইত্যাদি।
7। তোমাদের বিদ্যালয়ের বাগানে অনেক আগাছা হয়েছে। সেগুলি নির্মূল করার জন্য তুমি কোন হরমোন প্রয়োগ করবে এবং কেন?
উত্তর – আমাদের বিদ্যালয়ের বাগানে অনেক আগাছা হয়েছে। সেগুলি নির্মূল করার জন্য আমি অক্সিন হরমোন প্রয়োগ করবো। আগাছা দূর করার জন্যে আগাছার উপরে কৃত্রিম অক্সিন (মিথাইল ক্লোরোফেনক্সি অ্যাসেটিক অ্যাসিড) স্প্রে করলে, এটি অন্যান্য কোন ফুল, ফলের কোনরূপ ক্ষতি না করে শুধুমাত্র আগাছা বিনষ্ট করে। অক্সিনের এই ধর্মের জন্য একে উইডিসাইড হরমোন বলা হয়। [উইড কথার অর্থ আগাছা]
8। প্রকল্পিত হরমোন কী?
উত্তর – যে সমস্ত হরমোনের ক্রিয়া উদ্ভিদ দেহে লক্ষ্য করা যায় কিন্তু এর সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় না, এমন কি এই সমস্ত হরমোনের রাসায়নিক গঠনও জানা যায় না, তাদের প্রকল্পিত হরমোন বলে। যেমন – ফ্লোরিজিন হরমোন। মনে করা হয়, এই হরমোন উদ্ভিদ দেহে ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।
9।অগ্রস্থ প্রকটতা বলতে কি বোঝো?
উত্তর- অগ্র মুকুল উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে আর কাক্ষিক মুকুল উদ্ভিদের প্রস্থ অর্থাৎ শাখা প্রশাখার বৃদ্ধি ঘটায়। আবার দেখা যায় অগ্র মুকুলকে কেটে দিলে কাক্ষিক মুকুল বৃদ্ধি পায়। অগ্র মুকুলের উপস্থিতি, কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। উদ্ভিদ হরমোন অক্সিন অগ্রমুকুলে সংশ্লেষিত হয় এবং নীচে পরিবাহিত হয়ে কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি রোধ করে। একে অগ্রস্থ প্রকটতা বলে। এর ফলে উদ্ভিদ পার্শ্বীয় দিকে না বেড়ে, উপরের দিকে অর্থাৎ লম্বায় বেড়ে ওঠে।
10। হরমোনকে জীবদেহের রাসায়নিক সমন্বয়কারী বলা হয় কেন?
উত্তর- হরমোন জীবদেহের কিছু নির্দিষ্ট স্থান থেকে ক্ষরিত হয় এবং ধীরে ধীরে বাহিত হয়ে তার নির্দিষ্ট কারক অঙ্গে (Target organ) পৌঁছে যায় এবং কোশের রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এইভাবে হরমোন জীবদেহে রাসায়নিক সমন্বয় সাধন করে। তাই হরমোনকে জীবদেহের রাসায়নিক সমন্বয়কারী বলা হয়।
আরো পড়ো → আলো প্রশ্ন উত্তর
দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (LA)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 5]
1। উদ্ভিদদেহে হরমোনের সাধারণ কাজগুলি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর- উদ্ভিদদেহে হরমোনের সাধারণ কাজগুলি হল-
ক) বৃদ্ধি– অক্সিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলে কোশ বিভাজন ত্বরান্বিত করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটানো। এছাড়া অক্সিন সেলুলোজ জাতীয় উৎসেচকের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোশপ্রাচীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে, ফলে কোশ আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং অক্সিন হরমোন উদ্ভিদের অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ঘটিয়ে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন হরমোনও উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
খ) ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ– অক্সিন হরমোন উদ্ভিদের জিওট্রপিক ও ফটোট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে। যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে অভিকর্ষের গতিপথ অনুসারে উদ্ভিদ অঙ্গের বক্র চলন হয় তখন তাকে জিওট্রপিক চলন বলে। অক্সিন বিটপ অঞ্চলে সংশ্লেষিত হয়ে নীচের দিকে নেমে এসে মূলের অগ্রভাগে পৌছোয়। কম ঘনত্বের অক্সিন মূলে অধিক কোশ বিভাজন ঘটায় তাই মূলের অগ্রভাগ অপেক্ষা মূলের উপরের অংশে অধিক বৃদ্ধি ঘটে। তার ফলে মূল মাটির নীচের দিকে অগ্রসর হয়।
আলোক উৎসের গতিপথ অনুসারে উদ্ভিদ অঙ্গের যে বক্র চলন ঘটে তাকে বলা হয় ফটোট্রপিক চলন। কান্ডে আলো যেখানে পড়ে অক্সিন তার বিপরীত দিকে চলে যায়। অন্ধকার অঞ্চলে অক্সিন বেশী পরিমাণে সঞ্চিত হতে থাকে অর্থাৎ ঐ অঞ্চলে অক্সিনের ঘনত্ব বাড়তে থাকে। বেশি মাত্রায় সঞ্চিত অক্সিন কান্ডের ওই অঞ্চলের কোশগুলির দ্রুত বিভাজন ঘটায়। ফলে উদ্ভিদের কান্ড আলোর উৎসের দিকে বেঁকে যায়।
গ) জরা প্রতিরোধ– বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গাছের পাতার ক্লোরোফিল নষ্ট হয়ে গিয়ে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। কিন্তু সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে সাইটোকাইনিন ক্লোরোফিল বিনষ্টকারী ক্লোরোজিনেস উৎসেচকের ক্রিয়াকে বিনষ্ট করে। ফলে পাতা দীর্ঘদিন সতেজ থাকে। তাই ফুলদানিতে পাতাবাহার গাছ বা ফুলের শাখাকে সতেজ রাখতে সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করা হয়।
ঘ) জিনগত খর্বতা দূরীকরণ- কোন উদ্ভিদের জিনগত খর্বতা জিব্বেরেলিন দূর করতে পারে। জিব্বারেলিন দুটি পর্বের মধ্যবর্তী স্থানে মাইটোসিস কোশ বিভাজন দ্বারা কোশের স্ংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং কোশের আয়তন বৃদ্ধি করে, পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। এই ভাবে জিব্বেরেলিন উদ্ভিদ কান্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। ফলে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয়।
ঙ) সাইটোকাইনিন কোশ বিভাজন সাহায্য করে– সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের কোশ চক্রের S দশায় DNA এর সংশ্লেষ ঘটায়। এছাড়া সাইটোকাইনিন সাইটোকাইনেসিস প্রক্রিয়াতে সহায়তা করে।
2। জিব্বেরেলিনের কয়েকটি প্রকারভেদের নাম লেখো। উদ্ভিদদেহে জিব্বেরেলিনের ভূমিকা উল্লেখ করো।
উত্তর- জিব্বেরেলিনের 130টি প্রকারভেদ আবিষ্কৃত হয়েছে; এদের GA (রাসায়নিক নাম) নামে চিহ্নিত করা হয়, যেমন- GA1, GA2, GA3, …….. GA130 ইত্যাদি।
উদ্ভিদদেহে জিব্বেরেলিনের ভূমিকা হল-
ক) মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা দূরীকরণ ও অঙ্কুরোদগম-
প্রতিটি বীজের একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জীবনের লক্ষণগুলো প্রকাশ হয় না। একটা নির্দিষ্ট সময়কালের পরেই বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে। এই সময় কালকেই বলা হয় বীজের সুপ্তাবস্থা । এই সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করতে সাহায্য করে জিব্বেরেলিন। জিব্বেরেলিন ধান, গম প্রভৃতি এক বীজপত্রী দানাশস্যের সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ করে অঙ্কুরোদগম ঘটাতে সাহায্য করে। এই সব বীজের শস্যকে ঘিরে অ্যালিউরোন স্তর থাকে। সেই স্তরে জিব্বেরেলিন অ্যামাইলেজ উৎসেচকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে যা শ্বেতসারকে দ্রবণীয় শর্করায় পরিণত করে। ভ্রূণ এই শর্করাকে শোষণ করে দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে।
খ) উদ্ভিদের জিনগত খর্বতা দূরীকরণ-
কোন উদ্ভিদের জিনগত খর্বতা জিব্বেরেলিন দূর করতে পারে। জিব্বারেলিন দুটি পর্বের মধ্যবর্তী স্থানে মাইটোসিস কোশ বিভাজন দ্বারা কোশের স্ংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং কোশের আয়তন বৃদ্ধি করে, পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। এই ভাবে জিব্বেরেলিন উদ্ভিদ কান্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। ফলে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয়।
গ) ফলের আকার বৃদ্ধি-
জিব্বেরেলিনের প্রয়োগে আঙুর, আপেল, ন্যাসপাতি প্রভৃতি ফলের ফল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ফলের আকারও বৃদ্ধি পায়। যেমন- G3 প্রয়োগে আঙুরের বৃন্তের বৃদ্ধি ঘটে, ফলে আঙুরের থোকা বড় হয় (অর্থাৎ আঙুরের থোকায় আঙুরের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে) আবার আঙুরের আকারও বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ো → উদ্ভিদ হরমোন প্রশ্ন – উত্তর আলোচনা
WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো → WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো → YouTube চ্যানেল
- লাইক করো → Facebook পেইজ
- সাবস্ক্রাইব করো → টেলিগ্রাম চ্যানেল
আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।