শ্রেণি – নবম | বিভাগ – বাংলা | অধ্যায় – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি (Byomjatrir Diary Question Answer)
এই পর্বে রইল সত্যজিৎ রায় রচিত কল্পবিজ্ঞানের গল্প ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ থেকে সম্পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা।
Table of Contents
সঠিক উত্তর নির্বাচন করো (MCQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]
১। প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রিটা যাঁর থেকে পাওয়া গিয়েছিল, তিনি হলেন- ক) প্রোফেসর শঙ্কু খ) তারক চাটুজ্যে গ) প্রহ্লাদ ঘ) অবিনাশবাবু
উত্তর- প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রিটা যাঁর থেকে পাওয়া গিয়েছিল, তিনি হলেন- খ) তারক চাটুজ্যে।
২। তারকবাবু তাঁর সব ঘটনা টেনে আনতেন – ক) রোবটাকে খ) হরিণকে গ) বিড়ালকে ঘ) বাঘকে
উত্তর- তারকাবাবু তাঁর সব ঘটনা টেনে আনতেন- ঘ) বাঘকে।
৩। তারকবাবু সুন্দরবন থেকে ডায়রি ছাড়া পেয়েছিলেন – ক) হরিণের শিং খ) গোসাপের চামড়া গ) কিছু ছবি ঘ) কিছু পাথর
উত্তর- তারকবাবু সুন্দরবন থেকে ডায়রি ছাড়া পেয়েছিলেন- খ) গোসাপের চামড়া।
৪। শঙ্কুর ডায়রির লেখায় লেখক প্রথমবার যে রংটি দেখেছিলেন- ক) লাল খ) সবুজ গ) নীল ঘ) কালো
উত্তর- শঙ্কুর ডায়রির লেখায় লেখক প্রথমবার যে রংটি দেখেছিলেন- খ) সবুজ।
৫। বিজ্ঞানের কথা উঠলেই শঙ্কুর সঙ্গে ঠাট্টা করতেন – ক) প্রহ্লাদ খ) বিধুশেখর গ) অবিনাশবাবু ঘ) তারকবাবু
উত্তর- বিজ্ঞানের কথা উঠলেই শঙ্কুর সঙ্গে ঠাট্টা করতেন- গ) অবিনাশবাবু।
৬। ‘আজ দিনের শুরুতেই একটা বিশ্রী কাণ্ড ঘটে গেল।’ – উদ্ধৃতাংশে যে দিন্টির প্রসঙ্গ রয়েছে সেটি হল – ক) ১লা জানুয়ারি খ) ৫ই জানুয়ারি গ) ১২ই জানুয়ারি ঘ) ২৫শে জানুয়ারি
উত্তর- ‘আজ দিনের শুরুতেই একটা বিশ্রী কাণ্ড ঘটে গেল।’ – উদ্ধৃতাংশে যে দিন্টির প্রসঙ্গ রয়েছে সেটি হল – ১লা জানুয়ারি।
৭। প্রোফেসর শঙ্কুর চাকর তার কাছে রয়েছে – ক) ১২ বৎসর খ) ১৮ বৎসর গ) ২৭ বৎসর ঘ) ২৮ বৎসর
উত্তর- প্রোফেসর শঙ্কুর চাকর গ) ২৭ বৎসর তার কাছে রয়েছে।
৮। প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রিটা কে খেয়েছিল? ক) কুকুরে খ) পাগলে গ) বিড়ালে ঘ) ডেঁয়োপিঁপড়েতে
উত্তর – প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রিটা ঘ) ডেঁয়োপিঁপড়েতে খেয়েছিল।
৯। প্রোফেসর শঙ্কু মানুষের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য আবিষ্কার করেন- ক) বটিকা – ইণ্ডিকা খ) ফিসপিল গ) শাঙ্কোভাইট ঘ) নস্যাস্ত্র
উত্তর- প্রোফেসর শঙ্কু মানুষের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য ক) বটিকা – ইণ্ডিকা আবিষ্কার করেন।
১০। উল্কার গর্তে কী উঁকি মারছিল? ক) শেয়ালের বাচ্চা খ) গো – সাপ গ) ডায়রি ঘ) জ্বলন্ত উল্কাখন্ড
উত্তর- উল্কার গর্তে গ) ডায়রি উঁকি মারছিল।
১১। ব্যোমযাত্রী হল- ক) পাতাল যাত্রী খ) আকাশ যাত্রী গ) অরণ্য যাত্রী ঘ) জেল যাত্রী
উত্তর- ব্যোমযাত্রী হল – খ) আকাশ যাত্রী।
১২। মঙ্গলগ্রহের রং কী ছিল? ক) নীল খ) লাল গ) হলুদ ঘ) সবুজ
উত্তর- মঙ্গলগ্রহের রং খ) লাল ছিল।
১৩। প্রোফেসর শঙ্কু ফিস পিল (Fish pill) বানিয়েছিলেন- ক) নিজের জন্য গ) বিধুশেখরের জন্য ঘ) প্রহ্লাদের জন্য
উত্তর- প্রোফেসর শঙ্কু ফিস পিল খ) নিউটনের জন্য বানিয়েছিলেন।
১৪। তারকবাবু শঙ্কুর ডায়রি সুন্দরবনের কোন অঞ্চলে পান-(ক) ঝড়খালি (খ) মাথারিয়া (গ) বাঘমারি (ঘ) সজনেখালি
উত্তর- তারকবাবু শঙ্কুর ডায়রি সুন্দরবনের (খ) মাথারিয়া অঞ্চলে পান।
১৫। কোন গ্রন্থ বের করতে গিয়ে আলমারি থেকে শঙ্কুর ডায়রি বেরিয়ে পড়ে – (ক) গীতাঞ্জলি (খ) জলাজঙ্গল (গ) আরোগ্যনিকেতন (ঘ) চলন্তিকা
উত্তর- (ঘ) চলন্তিকা গ্রন্থ বের করতে গিয়ে আলমারি থেকে শঙ্কুর ডায়রি বেরিয়ে পড়ে।
১৬। লেখক কত রাত পর্যন্ত জেগে শঙ্কুর ডায়রি পড়ে শেষ করেন – (ক) ১২টা (খ) ১টা (গ) ২টো (ঘ) ৩টে
উত্তর- লেখক রাত (ঘ) ৩টে পর্যন্ত জেগে শঙ্কুর ডায়রি পড়ে শেষ করেন।
১৭। আয়নার ওপর থেকে প্রহ্লাদ ক্যালেণ্ডারটা নামিয়ে রেখেছিল কারণ – (ক) বছর শেষ হয়ে গেছে (খ) আয়না দেখার জন্য (গ) আয়না ভেঙে গেছে (ঘ) ক্যালেণ্ডারের প্রয়োজন নেই
উত্তর- আয়নার ওপর থেকে প্রহ্লাদ ক্যালেণ্ডারটা নামিয়ে রেখেছিল কারণ (ক) বছর শেষ হয়ে গেছে।
১৮। বাইকর্নিক অ্যাসিডের শিশি উলটে ফেলে দেয় – (ক) বেড়াল (খ) আরশোলা (গ) টিয়া (ঘ) টিকটিকি
উত্তর- বাইকর্নিক অ্যাসিডের শিশি উলটে ফেলে দেয় (ঘ) টিকটিকি।
১৯। প্রোফেসর শঙ্কুর ওজন – (ক) দু’মন সাত সের (খ) সারে পাঁচ মন (গ) এক মন এগারো সের (ঘ) এক মন সাত সের
উত্তর- প্রোফেসর শঙ্কুর ওজন (গ) এক মন এগারো সের।
২০। মঙ্গলে নদীর জল দেখল ঠিক মনে হয় যেন স্বচ্ছ -(ক) পেয়ারার জেলি (খ) আপেলের জেলি (গ) আমের জেলি (ঘ) লিচুর জেলি
উত্তর- মঙ্গলে নদীর জল দেখল ঠিক মনে হয় যেন স্বচ্ছ – (ক) পেয়ারার জেলি।
আরো পড়ো → ইলিয়াস গল্পের প্রশ্ন উত্তর
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (VSAQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]
১। “সময় হলে আত্মপ্রকাশ করবেন।” – প্রোফেসর শঙ্কু সম্পর্কে এমন মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর- প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু পনেরো বছর নিরুদ্দেশ থাকায় এক্সপেরিমেন্টে প্রাণ হারানো, গা–ঢাকা দেওয়ার মতো রটনা ওঠায় এমন মন্তব্য করা হয়েছে।
২। “খাতাটা হাতে নিয়ে খুলে কেমন যেন খটকা লাগল।” – ‘খটকা’ লেগেছিল কেন?
উত্তর – লেখক শঙ্কুর ডায়রি প্রথমবার যখন দেখেছিলেন, তখন কালির রং সবুজ থাকলেও কিছুদিন পর দেখল কালির রং লাল, তাই খটকা লেগেছিল।
৩। “প্রথমবারের কেলেঙ্কারিটার জন্য একমাত্র প্রহ্লাদই দায়ী।” – ‘কেলেঙ্কারিটা কী?
উত্তর – প্রহ্লাদ ঘড়িতে দম দিতে গিয়ে কাঁটাটা ঘুরিয়ে সাড়ে তিনঘণ্টা লেট করে ফেলে, যার ফলে রকেট উঠতে গিয়ে গোঁৎতা খেয়ে অবিনাশবাবুর মুলোর খেতে পড়ে কেলেঙ্কারি ঘটায়।
৪। “আমার রকেট কুড়ি মন পর্যন্ত জিনিস নির্ভয়ে নেওয়া চলতে পারে।” – রকেটে নেওয়া জিনিসগুলির ওজন বর্ণ্না করো।
উত্তর – প্রহ্লাদ – দুমন সাত সের, শঙ্কু- এক মন এগারো সের, বিধুশেখর- সাড়ে পাঁচ মন আর জিনিসপত্তর সরঞ্জাম মিলিয়ে পাঁচ মন; সর্বমোট ১৩ মন ৩৮ সের।
৫। “আর কোনো চিন্তা নেই।” চিন্তা না থাকার কারণ কী?
উত্তর – শঙ্কুর বেড়াল নিউটন মঙ্গল অভিযানে যাওয়ার জন্য মাছের মুড়োর বদলে Fish Pill বড়ি খাওয়ায় প্রোফেসর চিন্তামুক্ত হন।
৬। “বিধুশেখরও প্রহ্লাদকে দেখে হাসছিল।” – হাসার কারণ কী?
উত্তর- প্রহ্লাদকে মঙ্গলযাত্রার প্রয়োজনীয় পোশাক ও হেলমেট পরানোয় তার বিচিত্র চেহারা এবং হাবভাব দেখে বিধুশেখরের হাসি পেয়েছিল।
৭। “সে দিব্যি নিশ্চিন্ত আছে।” – কে, কেন নিশ্চিন্ত ছিল?
উত্তর – সরল বিশ্বাসে বিশ্বাসী প্রহ্লাদ মনে করে গ্রহের নাম মঙ্গল বলে সেখানে কোনো অনিষ্ট হতে পারে না – তাই সে নিশ্চিন্তে ছিল।
৮। “আরেকটা জন্তু কোথা থেকে এসে প্রহ্লাদকে তাড়া করে।” – প্রহ্লাদকে তাড়া করার কারণ কী?
উত্তর – প্রহ্লাদের সঙ্গে থাকা নিউটন মঙ্গল গ্রহের জন্তুটাকে মাছ ভেবে এক লাফে কাছে গিয়ে হাঁটুতে কামড়ে দেওয়ায় আরেকটা জন্তু প্রহ্লাদকে তাড়া করে।
৯। “বিধুশেখর আশ্চর্য সাহসের পরিচয় দিয়েছিল।” – “আশ্চর্য সাহস” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর- প্রহ্লাদ ও রকেটের দিকে ধেয়ে আসা মঙ্গলীয় এক সৈন্যকে লোহার হাতের বাড়ি দিয়ে ঘায়েল করে আরো তিনশো জন্তুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে যাওয়া হল “আশ্চর্য সাহস”।
১০। “কিন্তু তা হবার জো নেই।” – কী হবার জো নেই এবং কেন?
উত্তর – প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রিটা ছাপিয়ে, পরে বৈজ্ঞানিককে দিয়ে পরীক্ষা করে জাদুঘরে রাখার জো নেই; কারণ ডায়রিটা প্রায় শ-খানেক বুভুক্ষু ডেঁয়োপিঁপড়ে উদরসাৎ করে ফেলেছিল।
আরো পড়ো → ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর আলোচনা
রচনাধর্মী প্রশ্ন (LA)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৫]
১। “কিন্তু সে ডায়রি তারকবাবুর কাছে এলো কী করে?” – প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি তারকবাবুর হস্তগত হওয়ার বৃত্তান্ত সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – ভবঘুরে তারক চাটুজ্জ্যের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চলে এক বার একটা উল্কাখণ্ড পড়েছিল। খবরের কাগজ পড়ে তিনি জানতে পারেন পাথরটা বেশ বড়ো। সেই সঙ্গে এই খবরও জানতে পারেন যে, অতো বড়ো উল্কাপাতের ফলে সেখানে অনেক জন্তু-জানোয়ার মারা যায়। তাই সুযোগ সন্ধানী তারকবাবু সেখানে গিয়েছিলেন বাঘছাল পাওয়ার আশায়। জন্তু-জানোয়ারের ছাল বিক্রি করে অর্থলাভের আকাঙ্খায় সুন্দরবনে গেলেও সেখানে পৌঁছাতে তার ‘লেট’ হয়ে যায়। ফলে আশাহত হন তারকবাবু। বাঘ-হরিণের আশা ত্যাগ করে গোসাপের ছাল নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেন না তিনি। তাই উল্কা পড়া গর্তে তখনো খোঁজ চালিয়ে যেতে থাকেন আশাবাদী চাটুজ্জ্যে মশাই। হঠাৎ উল্কার পাথরটির খুব কাছেই মাটির মধ্যে ‘লাল কী একটা’ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। তারপর তিনি টেনে তুলে দেখেন ডায়রি, আর তা খুলে দেখেন প্রোফেসর শঙ্কুর নাম।
এভাবেই তারকবাবু সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চলে উল্কা পড়া গর্ত থেকে প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রিটা পান।
২। শঙ্কুর ল্যাবরেটারিতে করা এক্সপেরিমেন্ট এবং তার আবিষ্কার সম্পর্কে ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ থেকে যা জানা যায় লেখো।
উত্তর – ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্প থেকে আমরা জানতে পারি যে প্রোফেসর শঙ্কু তার ল্যাবরেটারিতে নিত্যদিন বিভিন্ন রাসায়নিক এবং বিভিন্ন ধরণের যন্ত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতেন।
প্রফেসরের পরীক্ষাগুলি একাধারে যেমন রোমাঞ্চকর তেমনই বিপদজনক, যেমন একটি ঘটনায় তাঁর ল্যাবে রাখা প্যারাডক্সাইট পাউডারের স্তূপের সঙ্গে বাইকর্নিক অ্যাসিড ‘কনট্যাক্ট’ হয়ে সাংঘাতিক বিস্ফোরণ ঘটার পরিস্থিতি তৈরি হয়। আবার, তিনি রকেট তৈরি করার উপাদান হিসাবে এক বিশেষ ধরনের ধাতু আবিষ্কারের জন্য যে কমপাউন্ড তৈরি করেন তার উপাদান ছিল – ব্যাঙের ছাতা, সাপের খোলস আর কচ্ছপের ডিমের খোলা। আবার কমপাউন্ডের সঙ্গে একুইয়স ভেলোসিলিকা মিশিয়ে নতুন একটি ধাতু তৈরি করেন।
এছাড়া, প্রোফেসরের আবিষ্কারের কীর্তিও নেহাৎ কম নয়! মঙ্গল গ্রহে যাবার জন্য কুড়ি মন ওজন বহন সক্ষম রকেট তিনি আবিস্কার করেন। বছরের পর বছর রকেটে যাত্রাকালীন সময়ে বেঁচে থাকার জন্য বেড়াল নিউটনের জন্য আবিষ্কার করেন Fish Pill -যা একটা খেলে সাত দিনের খাওয়া হয়ে যায়। প্রহ্লাদ ও নিজের জন্য বটফলের রস থেকে তৈরি করেছিলেন ‘বটিক-ইন্ডিকা’ নামের বড়ি, যা খেলে পুরো একদিনের জন্য খিদে-তেষ্টা মিটে যায়। এছাড়া মঙ্গল যাত্রীদের জন্য হেলমেট ও পোশাক আবিষ্কার করেন। বিস্ময়কর যন্ত্রমানব বিধুশেখর তৈরি করেন। ‘Snuff-gun’ (নস্যাস্ত্র) নামক তেত্রিশ ঘণ্টার হাঁচি উৎপাদক বন্দুক এবং ভয়ংকর স্বপ্ন উৎপাদক ‘জৃম্ভনাস্ত্র’ বড়ি-ও ছিল তাঁর আবিষ্কারের ঝুলিতে।
৩। ‘আমরা দুঘণ্টা হল মঙ্গল গ্রহে নেমেছি।’ – তারা নামার পর মঙ্গলের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং প্রাণী যা দেখেছিল তার বর্ণনা দাও।
উত্তর – সত্যজিৎ রায় রচিত কল্পবিজ্ঞানের গল্প ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’-তে বর্ণিত মঙ্গল গ্রহের পাথরের ঢিপিগুলির রং হলদে। গাছপালা মাটি পাথর সবই নরম রবারের মতো। সেখানকার নদীতে বহমান জলের বর্ণ লাল। প্রবাহিত জল তরল নয় বরং স্বচ্ছ পেয়ারার জেলির মতো। মঙ্গলের ঘাস আর গাছপালা সব নীল রঙের, আর আকাশের রং সবুজ। পৃথিবীর তুলনায় উলটো রকমের মঙ্গলে বিচিত্র আবহাওয়া এবং বরফের পাহাড় বিরাজমান। মঙ্গল গ্রহের মাধুর্যময় ভোরের আকাশে সবুজ রঙের ওপর লালের ছোপ পড়ে অসাধারণ হয়ে ওঠে। সুতরাং সব মিলিয়ে প্রোফেসর শঙ্কু এবং তার সহযাত্রীরা মঙ্গল গ্রহের যে নিসর্গ সৌন্দর্য্য অবলোকন করেছিলেন, তা এককথায় বিস্ময়কর।
এদিকে মঙ্গলের জীবগুলিকে অদ্ভুত দেখতে। আঁশটে গন্ধে পূর্ণ মঙ্গল গোছের জীব দেখতে মানুষও নয়, জন্তুও নয় আবার মাছও নয়; আসলে তিনের সঙ্গেই কিছু কিছু মিল আছে। এরা লম্বায় তিন হাত পরিমাণ। এদের পা রয়েছে, তবে হাতের বদলে মাছের মতো ডানা। অস্বাভাবিক রূপের সেই প্রাণীদের মাথায় ‘মুখজোড়া দন্তহীন হাঁ, ঠিক মাঝখানে প্রকান্ড একটা সবুজ চোখ’। এদের সর্বাঙ্গে চামড়ার বদলে মাছের মতো আঁশ। এরা ভালো ছুটতে পারে না, মানুষের মতো কথা বলতে পারে না। সামান্য বেড়ালের কামড় খেয়ে পালায়, ঝিঝির মতো ‘তিন্তিড়ি তিন্তিড়ি’ বলে ডাকে আর প্রচণ্ড আঘাত পেলে ‘চী’ শব্দ করে। তবে এদের একটা গুণ রয়েছে, বিপদ বুঝলে সঙ্গবদ্ধ প্রতিরোধ ও আক্রমণ করে।
আরো পড়ো → পৃথিবীপৃষ্ঠে কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয়
৪। “মঙ্গল যে কত অমঙ্গল হতে পারে, সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।” মঙ্গল কীভাবে অমঙ্গল হয়ে উঠেছিল আলোচনা করো।
উক্তিটি সত্যজিৎ রায় রচিত ব্যোমযাত্রীর ডায়রি ছোটগল্প থেকে উধৃত হয়েছে।
গল্পের প্রথমে আমরা জানতে পেরেছি যে, প্রফেসর শঙ্কু তার সঙ্গীদের নিয়ে, তাঁর সৃষ্ট মহাকাশযানে চড়ে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছেছেন। মঙ্গলে অবতরণের পর, তারা নানান সমস্যার সম্মুখীন হন।
প্রথম ভোরে পাথর কুড়োতে ব্যস্ত প্রহ্লাদ হঠাৎ দেখে যে বিড়াল নিউটন একলাফে এক মঙ্গলীয় প্রাণীর হাঁটুতে কামড় বসিয়েছে। মঙ্গলীয় প্রাণীটি মানুষও নয়, জন্তুও নয় আবার মাছও নয়, বরং এই তিন রকম প্রাণীর সাথেই তাঁর মিল আছে। নিউটনের কামড় খেয়ে ভীত জন্তুটা ঝিঝির মতো বিকট চিৎকার করে পালিয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু আরেকটা জন্তু কোথা থেকে এসে প্রহ্লাদকে তাড়া করে। বিপদ বুঝে প্রহ্লাদ নিউটনকে নিয়ে উর্ধবশ্বাসে রকেটের দিকে দৌড়ে যায়। প্রহ্লাদ দৌড়ে জন্তুটাকে পরাস্ত করে রকেটে উঠে পড়লে সেই মূহূর্তে প্রফেসর শঙ্কুর যন্ত্রমানব বিধুশেখর লাফ দিয়ে রকেট থেকে জন্তুটার সামনে এসে দাঁড়ায়। এবং এরপর চোখের পলকে বিধুশেখরের লোহার হাতের বাড়ি খেয়ে জন্তুটা ‘চী’ শব্দ করে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে মাটিতে পড়ে যায়। এই সময়ে শত শত মঙ্গলীয় সৈন্য রকেটের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে প্রোফেসরের সামনে এই ঘটনাগুলি ঘটে যায় এবং বেগতিক বুঝে উত্তেজিত বিধুশেখরকে বোতাম টিপে বিকল করে দেন। এদিকে একশো গজের মধ্যে চলে আসা শত-সহস্র মঙ্গলীয় সৈন্যের প্রতিহিংসা থেকে বাঁচতে কোনো রকমে বিধুশেখরকে দুটুকরো করে আলাদা আলাদা করে টেনে হিচড়ে রকেটে তোলেন।
দরজা বন্ধের মূহূর্তে মঙ্গলীয়ের ঝাপটা খেয়ে শঙ্কু জ্ঞান হারান এবং কোন অলৌকিক উপায়ে তাদের ব্যোমযান পুনরায় চালু হয়ে মঙ্গলের মাটি ছেড়ে মহাকাশে ভেসে যায়। মঙ্গল গ্রহের এই অদ্ভুত ঘটনাকেই প্রফেসর শঙ্কু অমঙ্গল বলে উল্লেখ করেছেন।
আরো পড়ো → জৈবনিক প্রক্রিয়া প্রশ্ন উত্তর আলোচনা
৫। “সে তার চেয়ারে বসে দুলছে ও মধ্যে মধ্যে ‘টাফা’ বলেছে।” – ‘টাফা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – সত্যজিৎ রায় রচিত কল্পবিজ্ঞানের গল্প ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’-তে আমরা টাফা গ্রহের বিবরণ পাই। এক অবিশ্বাস্য জগতের মধ্যে অবস্থিত ‘টাফা’ যেখানে আকাশময় কেবল সোনার বুদবুদ ফুটছে আর ফাটছে বলে মনে হয়। মনোহরণকারী আলোর আতসবাজির উৎসব যেখানে অনবরত চলে, যে জগতে ভয়ঙ্কর পাথরের অগ্নিপিণ্ডও বিচরণ করে। সেই জগতের এক মনোমুগ্ধকর ঝলমলে সাদা গ্রহ হল ‘টাফা’। বিধুশেখরের বিবরণ থেকে জানা যায় টাফাতে সৌরজগতের প্রথম সভ্য লোকেরা বাস করে। পৃথিবীর চেয়ে কয়েক কোটি বছরের পুরানো তাদের সভ্যতা; তাদের গ্রহের প্রত্যেকে বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিমান। তাই টাফাবাসীদের প্রয়োজনে তারা অন্যান্য সব গ্রহ থেকে কমবুদ্ধি লোক বেছে টাফায় আনিয়ে বসবাস করাচ্ছে।
কিন্তু টাফায় পৌঁছে প্রফেসর শঙ্কু বুঝতে পারেন যে বিষয়টি ঠিক তার উল্টো। অর্থাৎ টাফাবাসীরা মানুষের অবস্থার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। টাফাবৃন্দরা আসলে অতিকায় পিঁপড়ে জাতীয় – ‘বিরাট মাথা, আর চোখ, কিন্তু সেই অনুপাতে হাত-পা সরু।’ তাদের ঘরবাড়ি কিছু নেই, এমনকী সেখানে গাছপালাও নেই। এরা গর্ত দিয়ে মাটির ভিতর ঢুকে যায় আর সেখানে বসবাস করে।
তবে টাফাবৃন্দরা প্রোফেসর ও তাঁর সঙ্গীদের থাকার জন্য যথাযথ আয়োজন করে। তাই টাফাতে প্রহ্লাদ, নিউটন, প্রোফেসরের যত্নের কোন অভাব হয় না। টাফাবাসীরা বাংলা ভাষাও জানে দেখে প্রোফেসর বিস্মিত হন ।
আরো পড়ো → খেয়া প্রশ্ন উত্তর
WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো → WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো → YouTube চ্যানেল
- লাইক করো → Facebook পেইজ
- সাবস্ক্রাইব করো → টেলিগ্রাম চ্যানেল
আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।