
শ্রেণি – দশম | বিভাগ – ইতিহাস | অধ্যায় – ইতিহাসের ধারণা| Itihaser Dharona (Chapter 1)
এই পর্বে রইল দশম শ্রেণির ইতিহাস বিভাগের প্রথম অধ্যায় – ইতিহাসের ধারণা থেকে কয়েকটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ) এবং সেগুলির উত্তর।
দুটি বা তিনটি বাক্যে উত্তর দাও। (SAQ)
১। সামাজিক ইতিহাস কি? [মাধ্যমিক ২০১৭]
উত্তর – যে ধরনের ইতিহাস চর্চায় সমাজ পরিবর্তনের ধারা প্রধান প্রাসঙ্গিকতা পায় তাকে সামাজিক ইতিহাস চর্চা বলা হয়। একে নতুন সামাজিক ইতিহাসও বলা হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই ধরনের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়। এই ধরনের ইতিহাস চর্চায় মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি দিকগুলিতে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হয়।
২। ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কি? [মাধ্যমিক ২০১৭]
উত্তর – অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতক জুড়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের প্রবল সমালোচনা করা হত। ভারতবাসীর উপর তাদের অত্যাচার এবং শোষণের তুলে ধরে অন্যান্য ভারতবাসীর মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হত। শুধু তাই নয় রাজনীতি ছাড়াও, এই সংবাদপত্রগুলিতে সেই সময়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চিত্র প্রকাশিত হত। তাই বলা যায় সামাজিক ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
৩। পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব কি? [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তর – প্রাকৃতিক পরিবেশ কিভাবে মানুষের জীবনধারণ, রীতিনীতি এবং সভ্যতাকে প্রভাবিত করে তার চর্চাই এই ধরনের ইতিহাস চর্চার প্রধান বৈশিষ্ট্য। পরিবেশ একটি জাতি বা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার ধরণ, সংস্কৃতি, ধর্মাচার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় আরবদেশের জনগোষ্ঠীর সামাজিক জীবন এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনগোষ্ঠীর সামাজিক জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই ভিন্নতার প্রধান কারণ হল পরিবেশগত পার্থক্য। তাই বলা যায় আধুনিক সামাজিক ইতিহাস চর্চায় পরিবেশের ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
পড়া মনে রাখার সেরা উপায়! ↓
৪। ‘সরকারী নথীপত্র’ বলতে কি বোঝায়? [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তর – সরকারী কাজে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র, দলিল – দস্তাবেজ, প্রতিবেদন, বিবরণ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় নথিপত্রকে, সরকারী নথিপত্র বলা হয়। মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারে এই গুরুত্বপূর্ণ নথীগুলি সংরক্ষণ করা হয়; এই কাজের জন্য আলাদা সরকারী দপ্তর ছিল। জাতীয় স্তরে তো বটেই জেলা এবং নিম্নস্তরের প্রশাসনিক স্তরেও প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয়। সরকারী নথীপত্রকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে; যথা পুলিশ ও গোয়েন্দার গুপ্ত প্রতিবেদন, সরকারী আধিকারিকদের প্রতিবেদন, বিবরণ এবং চিঠিপত্র।
৫। খেলার ইতিহাসে ১৯১১ সালটি গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর – ১৯১১ সালে মোহনবাগান ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে পরাজিত করে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে IFA শিল্ড জয় করে। এটি ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। শিবদাশ ভাদুড়ির অধিনায়কত্বে মোহনবাগান দলের খেলোয়াড়েরা ইংরেজ রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, সকল বাঁধা পেরিয়ে, খালি পায়ে খেলে ইংল্যন্ডের নামি দল ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে পরাজিত করে। এই ঘটনা গোটা দেশে এক প্রবল জাতীয়তাবাদের সঞ্চার করে।
আরো পড়ো → পরিবেশের জন্য ভাবনা – অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর আলোচনা
৬। আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় পোশাক – পরিচ্ছদের ইতিহাসের দুটি গুরুত্ব লেখ।
উত্তর – ক। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান – পোশাক পরিচ্ছদের মাধ্যমে মানুষের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থান বোঝা যায়। যেমন মধ্যযুগে ফ্রান্সে ধনী ও অভিজাতরাই ব্রিচেস (একপ্রকারের লম্বা মোজা) পরতেন, গরীব খেটে খাওয়া মানুষদের ব্রিচেস পরার অনুমতি ছিল না। এদের সাঁ কুলোৎ বলা হত।
খ। মানসিক অবস্থান – পোশাক পরিচ্ছদের মাধ্যমে কিছু সময় একটি বিশেষ ভাবধারা বা আদর্শ প্রকাশ করা হয়। যেমন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যে সকল মানুষেরা গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রানিত হতেন তারা গান্ধী টুপী নামে একপ্রকার বিশেষ টুপী পরতেন।
পরীক্ষায় প্রতিটি অধ্যায়ে ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য ↓
৭। খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার দুটি গুরুত্ব লেখ।
উত্তর – ক। সভ্যতার দিকনির্দেশ – সভ্যতার অগ্রগতির স্পষ্ট দিকনির্দেশ করে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। যেমন মানুষ আগে কাঁচা মাংস ভক্ষন করতো, আগুন আবিষ্কারের পরে মাংস পুড়িয়ে খাবার অভ্যাস শুরু হয়।
খ। জীবনযাপনের চিত্র – খাদ্যাভ্যাসের সাথে মানুষের জীবনযাপন এবং বাসস্থানের সম্পর্ক গভীর। খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে এর স্পষ্ট পরিচয় মেলে। যেমন – গাঙ্গেয় সমভূমিতে বসবাস করার ফলে বাঙালির অন্যতম প্রিয় খাদ্য হল মাছ – ভাত।
আরো পড়ো → ইতিহাসের ধারণা অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন – উত্তর
৮। শিল্পচর্চার ইতিহাস বলতে কি বোঝায়?
উত্তর – আধুনিক ইতিহাস চর্চায়, সাংস্কৃতিক বিদ্যাচর্চা যেমন সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, নৃত্য, চলচ্চিত্র ইত্যাদির ব্যবহারকে শিল্পচর্চার ইতিহাস বলা হয়। এই ধরনের ইতিহাসচর্চা শিল্পকীর্তির গুনগত বিবর্তনের ধারণা দেয়। শিল্পচর্চার ইতিহাসে একটি সভ্যতা অথবা জাতির সংস্কৃতির পরিচয় প্রতিফলিত হয়। ১৯৮০-এর দশক থেকে এইধরনের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়।
৯। সামরিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কি?
উত্তর – বিভিন্ন সময়ের শাসকদের সামরিক বাহিনীর প্রকৃতি, সমরকুশলতা, সামরিক অস্ত্রের ব্যবহার ও গুণগত বিকাশ প্রভৃতির বিশ্লেষণ হল সামরিক ইতিহাস চর্চার প্রধান বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি ধাপে রাষ্ট্র বা শাসকশ্রেণি তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সামরিক বাহিনী তৈরি করে ও প্রয়োজনে তা প্রয়োগ করে। তাই কোন জাতির ইতিহাস রচনার সম্পূর্ণ চিত্র ফুটিয়ে তুলতে গেলে সামরিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় আজাদ হিন্দ বাহিনীর গঠন ও তাদের সামরিক অভিযান ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১০। আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ।
আত্মজীবনী – এটি হল লেখকের ফেলে আসা জীবনের ঘটনাবলী। এই ধরনের লেখায় লেখক তাঁর জীবনের ঘটনাগুলি ধারাবাহিক ভাবে লিপিবব্ধ করেন।
আত্মজীবনীতে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি মতাদর্শ, ঘটনার বিশ্লেষণ, আত্মসমালোচনার মত দিকগুলি ফুটে ওঠে।
স্মৃতিকথা – এই ধরনের লেখার মাধ্যমে লেখক তাঁর অতীতের কোন ব্যাক্তি বা সাক্ষী থাকা ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।
স্মৃতিকথার মাধ্যমে মূলত একটি সময়কালের কথা তুলে ধরা হয়।
আরো পড়ো → সংস্কারঃ বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (দ্বিতীয় অধ্যায়) অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাবার জন্য –
-
- ফলো করো → WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো → YouTube চ্যানেল
- লাইক করো → Facebook পেইজ
- সাবস্ক্রাইব করো → টেলিগ্রাম চ্যানেল
আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।