সংস্কারঃ বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা প্রশ্ন উত্তর | WB History Chapter – 2 Complete Question Answer | MCQ + VSAQ + SAQ + LA

বিনামূল্যে ইবুকের স্যাম্পল ডাউনলোড করো 👇

chapter-test-madhyamik-2025
sanskar-boisisto-o-porjalochona-questio-answer
শ্রেণি – দশম | বিভাগ – ইতিহাস | অধ্যায় – সংস্কারঃ বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা | Sanskar Boisisto o Porjalochona (Chapter 2)

এই পর্বে রইল দশম শ্রেণির ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় অধ্যায় – সংস্কারঃ বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা থেকে সম্পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা। প্রশ্ন উত্তর আলোচনা শুরু করার আগে, আমরা তোমাদের একটি বিশেষ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই।

আমরা জানি যে ভালো ভাবে প্রশ্ন – উত্তর তৈরি করলেও পরীক্ষায় অনেক ছাত্রছাত্রী ভালোভাবে লিখতে পারে না। এই সমস্যার একটি সমাধান আমরা তোমাদের দিতে চাই; লক্ষ্য করবে প্রতিটি বড় প্রশ্নের শেষে আমরা কয়েকটি বিশেষ KeyPoints উল্লেখ করেছি। ঐ বড়প্রশ্নগুলির মূল বিষয়গুলিই KeyPoints হিসাবে তোমাদের দেওয়া হয়েছে। ঐ KeyPoints গুলো যদি তোমরা মনে রাখতে পারো আমাদের বিশ্বাস সেক্ষেত্রে বড়প্রন্সের উত্তর লিখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না।

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো (MCQ)

1. ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন –
(ক) উমেশ চন্দ্র দত্ত (খ) শিশির কুমার ঘোষ (গ) কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার (ঘ) দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ [মাধ্যমিক’১৭]
উত্তর- (ক) উমেশ চন্দ্র দত্ত ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

2. নববিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-
(ক) দয়ানন্দ সরস্বতী (খ) কেশব চন্দ্র সেন (গ) স্বামী বিবেকানন্দ (ঘ) মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর [মাধ্যমিক’১৭]
উত্তর-(খ) কেশব চন্দ্র সেন নববিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

3. সাধারণ জনশিক্ষা কমিটি গঠিত হয়-
(ক) ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে (গ) ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে [মাধ্যমিক’১৭]
উত্তর- সাধারণ জনশিক্ষা কমিটি গঠিত হয় (ঘ) ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে।

4. নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদের প্রকাশক ছিলেন –
(ক) কালীপ্রসন্ন সিংহ (খ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত (গ) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (ঘ) রেভারেন্ড জেমস লং [মাধ্যমিক’১৮]
উত্তর-(ঘ) রেভারেন্ড জেমস লং নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদের প্রকাশক ছিলেন।

5. সতীদাহ প্রথা রদ হয় –
(ক) ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে (গ)১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে (ঘ)১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে [মাধ্যমিক’১৮]
উত্তর-(খ) ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা রদ হয়।


পড়া মনে রাখার সেরা উপায়! ↓

wb-porashona-to-the-point-ebook


6. সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করেছিলেন –
(ক) বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী (খ) স্বামী বিবেকানন্দ (গ) শ্রীরামকৃষ্ণ (ঘ) কেশব চন্দ্র সেন [মাধ্যমিক’১৮]
উত্তর – সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করেছিলেন (গ) শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।

7. ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ প্রকাশিত হত –
(ক)যশোর থেকে (খ) রাণাঘাট থেকে (গ) কুষ্টিয়া থেকে (ঘ) বারাসাত থেকে [মাধ্যমিক’১৯]
উত্তর – ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ প্রকাশিত হত (গ) কুষ্টিয়া থেকে

8. প্রথম সরকারী শিক্ষা কমিশন [হান্টার কমিশন] গঠিত হয় –
(ক) ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে (খ) ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে (গ) ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে (ঘ) ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে [মাধ্যমিক’২০]
উত্তর – (গ) ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সরকারী শিক্ষা কমিশন [হান্টার কমিশন] গঠিত হয়।

9. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন –
(ক) ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে (খ) ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে (গ) ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে (ঘ) ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে [মাধ্যমিক’২০]
উত্তর – (গ) ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন।

10. বাংলার নবজাগরণ ছিল –
(ক) ব্যাক্তিকেন্দ্রিক (খ) প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক (গ) কলকাতাকেন্দ্রিক (ঘ) গ্রামকেন্দ্রিক [মাধ্যমিক’২০]
উত্তর – বাংলার নবজাগরণ ছিল (গ) কলকাতাকেন্দ্রিক।


মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রতিটি অধ্যায়ে ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য ↓

wbporashona-madhyamik-chapter-test-2025


অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (VSAQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]

1. বামাবোধিনী পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর- বামাবোধিনী পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন উমেশ চন্দ্র দত্ত।

2. কোন বছর জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়েছিল?
উত্তর- ১৯০৬ সালে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়েছিল।

3. ব্রাহ্মসভা কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর- ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামমোহন রায়।

4. নীলদর্পণ নাটকটি কে রচনা করেন?
উত্তর- নীলদর্পণ নাটকটি রচনা করেছিলেন দীনবন্ধু মিত্র।

5. নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর প্রবর্তক কে?
উত্তর- নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর প্রবর্তক হলেন হেনরি লুইস ভিভিয়ান ডিরোজিও।


আরো পড়ো – মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

6. ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
উত্তর- ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ।

7. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর- ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন হরিশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়।

8. কলকাতা মেডিকেল কলেজ কোন বছর প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর- 1835 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

9. বাহ্মসমাজ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর- বাহ্মসমাজ ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।

10. রামকৃষ্ণ মিশন কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর- ১৮৯৭ সালের ৫ই মে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়।


আরো পড়ো → নদীর কাজ প্রশ্ন – উত্তর আলোচনা

সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ২]

1. ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা পত্রিকা’- তে সমাজের কোন কোন দিক তুলে ধরা হত?
উত্তর- ১৮৬৩ সালে হরিনাথ মজুমদারের সম্পাদনায় এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকাটিতে মূলত তৎকালীন গ্রাম ও গ্রামীণ সমাজের চিত্র অর্থাৎ গ্রামবাসীদের অবস্থা তাদের অসহায়তা, ব্রিটিশ নীলকর সাহেব, মহাজন ও জমিদারদের দ্বারা গ্রামীণ অসহায় কৃষকদের উপর নির্মম অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরা হত, এছাড়াও গ্রামীণ সমাজ ও তার রীতিনীতির আলোচনাও থাকত এই পত্রিকায়।

2. মধুসূদন গুপ্ত কেন স্মরণীয়? [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তর- উনবিংশ শতকে সমগ্র বাংলা জুড়ে যে নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল তারই অন্যতম পথিকৃৎ মধুসূদন গুপ্ত। তৎকালীন গোঁড়া সমাজ ব্যবস্থার ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে তিনি সর্বপ্রথম মেডিকেল কলেজে ১৮৩৬ সালে ড. হেনরি হ্যারি গুডিবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শব ব্যবচ্ছেদ করেন। তার এই কাজের খেসারৎ স্বরূপ সমাজ থেকে জাতিচ্যুত হলেও তিনি অবিচল ছিলেন তাই বাংলার চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে তিনি অবিস্মরণীয় ।

3. ‘চুইয়ে পড়া নীতি’ বলতে কি বোঝো?
উত্তর- চুইয়ে পড়া শব্দবন্ধটি সাধারণত আমরা তরল পদার্থের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি। কারণ পৃথিবীর অভিকর্ষের আকর্ষণে তরল পদার্থ উপর থেকে নীচের দিকে ছড়িয়ে পরে। ব্রিটিশ শাসিত ভারতের গভর্নর জেনারেলের আইন সদস্য টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তার প্রসঙ্গে এই তত্ত্বের উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, প্রথমে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়কে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে ও পরে তাদের থেকেই সমাজের সাধারণ ও নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে এই শিক্ষার প্রসার ঘটবে। পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের এই নীতিকেই ‘চুইয়ে পড়া নীতি’ বলে।


chapter-test-history-2025


4. এশিয়াটিক সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর- গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংসের সময়কাল থেকেই সর্বপ্রথম প্রাচ্য শিক্ষা প্রসারে গুরুত্ব আরোপিত হয়েছিল। তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্যার উইলিয়াম জোন্সের উদ্যোগে প্রাচ্য বিদ্যাচর্চার উদ্দ্যেশ্যে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা পায়।

5. শিক্ষার প্রসারে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত সনদ আইনের অবদান লেখ।
উত্তর- ব্রিটিশ অধিনস্থ ভারতবর্ষে মোট চারটি সনদ আইন পাশ হয়। প্রথম হয়েছিল ১৭৯৩ সালে এবং এর পর থেকে প্রতি ২০ বছর অন্তর অন্তর সনদ আইন পাশ হত। এই চারটির মধ্যে দ্বিতীয় অর্থাৎ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনটি শিক্ষার প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই আইনেই সর্বপ্রথম ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়।যা পরবর্তীকালে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল।


আরো পড়ো → উদ্ভিদের চলন – প্রশ্ন উত্তর আলোচনা

বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৪]

1. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও তার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে উডের নির্দেশনামা কার্যকর হলে ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতায় স্থাপিত হয় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে গড়ে তোলা হয়েছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দায়িত্বগুলি ছিল –

  • মহাবিদ্যালয় বা কলেজগুলির অনুমোদন দেওয়া
  • নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম তৈরি করা এবং সূচী অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া
  • পাঠ্যক্রম শেষে ছাত্রছাত্রীদের উপাধি প্রদান করা

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি সিনেট গঠন করা হয়। এই সিনেট পরিচালনার দায়িত্ব ছিল ৩৫ জন ইংরেজ এবং ৬ জন ভারতীয়ের। আধুনিক শিক্ষার সম্প্রসারণে বাংলা তথা ভারতের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এই শিক্ষাকেন্দ্র থেকে বহুমনিষীকে আমরা পেয়েছিলাম। যেমন, সাহিত্যিক বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন প্রথম ভারতীয় গ্রাজুয়েট। শুধু তাই নয়, মহিলাদের শিক্ষার জন্যও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়; প্রসঙ্গত কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ও চন্দ্রমুখী বসু যুগ্মভাবে স্নাতক হন, তারাই সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বপ্রথম মহিলা স্নাতক। পরবর্তী সময়ে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ উন্নতি সাধন হয়। আরো পরে ইউনিভার্সিটি আইনের (১৯০৪) ধারা অনুযায়ী বিজ্ঞান বিষয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজ স্থাপিত হয়। বলা যায় ব্রিটিশ সরকার এবং ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও চিন্তাবিদদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলার তথা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
KeyPoints
1857 খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন – লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরি করা হয় – আধুনিক শিক্ষার সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা – প্রথম ভারতীয় স্নাতক – স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সময়ে উন্নতি – কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজ

2. নব্য বেদান্ত সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – বেদান্ত কথার আক্ষরিক অর্থ হল বেদের অন্ত। এই দর্শনের মূল ভিত্তি ‘উপনিষদসমূহ’। বৈদিক যজ্ঞ ও ক্রিয়াকর্মের বদলে ধ্যান, অধ্যয়ন এবং আত্মবিশ্লেষণ ও উপলব্ধির মাধ্যমে ব্রহ্মের স্বরূপ লাভ করাই এই দর্শনের মূল লক্ষ্য। বেদান্তে মনে করা হয় যে ব্রহ্ম এবং জীব অভিন্ন। স্বামী বিবেকানন্দ বেদান্তের এই দর্শনকেই সরলভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন – ‘জীব সেবাই শিব সেবা’।

তিনি বেদান্তের ধারণাকে তৎকালীন ভারতের সামাজিক অবস্থার যুগোপযোগী করে তোলেন। তিনি সমন্বয়বাদী ভাবধারা অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মের বিভেদ ভুলে মানুষের সাথে মানুষের মিলনের কথা বলেন। স্বামীজী আত্মমুক্তির বদলে সমষ্টির মুক্তির কথা বলেন। আর এই মুক্তির অন্যতম উপায় হিসাবে তিনি ঈশ্বর জ্ঞানে জীবসেবার কথা বলেন। বেদান্তের মূল ভাবনা হল জাগরণ; স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ‘নব্য বেদান্তের’ ভাবনার মধ্যে দিয়ে তৎকালীন পরাধীন, দরিদ্র, জাতি ও ধর্মের বৈষম্যে জরাজীর্ণ, দুর্বল দেশবাসীকে আত্মজাগরণের এক নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করেন।

KeyPoints

বেদান্ত = বেদের অন্ত – ব্রহ্ম এবং জীব অভিন্ন – স্বামী বিবেকানন্দ বেদান্তের দর্শন সহজভাবে ব্যাখ্যা করেন – সমন্বয়বাদী ভাবধারা – আত্মমুক্তির বদলে সমষ্টির মুক্তি – ঈশ্বর জ্ঞানে জীবসেবা


wbp-to-the-point-history


3. বাংলার নবজাগরণ ছিল কলকাতা শহরকেন্দ্রিক – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর- নবজাগরণ শব্দের অর্থ হলো পুনর্জন্ম যা এককথায় ভাববিপ্লবকে বোঝায়। বাংলার নবজাগরণ বলতে মূলত বোঝায় ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের ব্রিটিশ অধীনস্থ বাংলায় সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের জোয়ার। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে বহু আধুনিকমনস্ক মানুষ সামাজিক পরিবর্তনে এগিয়ে আসে সমাজ-সংস্কার,ধর্মীয়-সংস্কার, সাহিত্যিক চেতনার বিকাশের মাধ্যমে। তৎকালীন সমাজে কুসংস্কার-অন্ধবিশ্বাসের জায়গায় মানবতাবাদ ও যুক্তিবাদকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হয়েছিল। এই প্রগতিশীল মনোভাবের বিকাশকে বহু ঐতিহাসিক বাংলার নবজাগরণ বলে অভিহিত করেছেন। যেমন- সুশোভন চন্দ্র সরকার।

কিছু ঐতিহাসিকের মতে এই নবজাগরণ মূলত শহরের এলিটিস্ট তথা উচ্চবর্ণের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পিছিয়ে পড়া সামাজিক মানুষ বা কৃষকদের কোনো উন্নতি এই নবজাগরণের ফলে হয়নি ও এই নবজাগরনের প্রাণকেন্দ্রই ছিল মূলত কলকাতা শহর। কলকাতার বাইরে গ্রামেগঞ্জে এর তেমন প্রভাব পড়েনি বা বলা যায় দরিদ্র শ্রেণীর গ্রামীন মানুষের সাথে এর কোনো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। এই নবজাগরনের সমালোচনা করেছেন ড:অমলেশ ত্রিপাঠি,সুমিত সরকার প্রমুখরা।তাদের মতে বাংলার নবজাগরণের মূল কেন্দ্র ছিল কলকাতা ও উচ্চশ্রেণীর জমিদার,চাকুরিজীবীরা এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল।

KeyPoints
বাংলায় সমাজ-সংস্কার,ধর্মীয়-সংস্কার – নবজাগরণ মূলত শহরের উচ্চবর্ণের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল – পিছিয়ে পড়া মানুষ বা কৃষকদের এই নবজাগরণের ফলে হয়নি – কলকাতার বাইরে গ্রামেগঞ্জে এর প্রভাব পড়েনি।


পড়া মনে রাখার সেরা উপায়! ↓

wb-porashona-to-the-point-ebook


4. উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে বেথুন সাহেব কি ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন? [মাধ্যমিক ১৯] 
উত্তর – ১৮৪০ ও ৫০ এর দশকে নারীশিক্ষার উদ্দেশ্যে যে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল তারই প্রথম প্রতিফলন ছিল ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশ ভারতের আইন পরিষদের সদস্য জন এলিয়ট ড্রিংকওয়াটার বেথুনের দ্বারা স্থাপিত ভারতীয় নারীশিক্ষার জন্য একটি বালিকা বিদ্যালয় ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল বা নেটিভ ফিমেল স্কুল’,যা বর্তমানে বেথুন বিদ্যালয় নামে পরিচিত। বেথুন সাহেব ১৮৪৮ সালে ভারতে আসেন তৎকালীন বড়লাট লর্ড ডালহৌসির আইনপরিষদের সচিব হিসেবে ও সেই বছরই শিক্ষা পরিষদের সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৮৪৯ সালের ৭ই মে ১১জন বালিকাকে নিয়ে সূচনা হয় বেথুন প্রতিষ্ঠিত “হিন্দু ফিমেল স্কুল”। প্রাথমিকভাবে দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের শিমুলিয়ার সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে এই বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বেথুনের জীবিত থাকাকালীন সময়ে এই বিদ্যালয় সরকারি সাহায্য ছাড়াই চলত ও সম্পূর্ণ খরচ বেথুন নিজেই বহন করতেন। বেথুনের মূল উদ্দেশ্যে ছিল ধর্মনিরপেক্ষভাবে ও মাতৃভাষার মাধ্যমে নারীশিক্ষা।বেথুন বিদ্যালয়ের উদ্বোধনে স্পষ্টরূপেই বাংলা ভাষায় নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ও পরবর্তীতে তার অনুরোধেই বিদ্যাসাগর সচিব হিসেবে এই বিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত হন। বেথুনের অনুরোধেই মদনমোহন তর্কলঙ্কার বিদ্যালয়ে বালিকাদের উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। বেথুনের উদ্দ্যোগেই আধুনিক ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম নারীশিক্ষার বিস্তারের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

KeyPoints
বড়লাট লর্ড ডালহৌসির আইনপরিষদের সচিব ও শিক্ষা পরিষদের সভাপতি জন এলিয়ট ড্রিংকওয়াটার বেথুন – ১৮৪৯ সালে বেথুন বিদ্যালয় স্থাপন – সম্পূর্ণ খরচ বেথুন নিজেই বহন করতেন – মূল উদ্দেশ্যে ছিল ধর্মনিরপেক্ষভাবে ও মাতৃভাষার মাধ্যমে নারীশিক্ষা – তাঁর উদ্যোগে বালিকাদের উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক রচিত হয় – ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম নারীশিক্ষার বিস্তারের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বেথুন সাহেব।

5. নীলদর্পণ নাটক’ থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কিরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায়? [মাধ্যমিক ১৯]
উত্তর- বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী ও প্রতিবাদী কণ্ঠ দীনবন্ধু মিত্র ১৮২৯ সালে নদীয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৬০ সালে রচিত নীলদর্পন নাটকটি তাঁর প্রথম নাটক যা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দীনবন্ধু ছিলেন ভারতীয় সরকারের ডাকবিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট,তাই ঢাকা শহর থেকে প্রকাশিত নীলদর্পন নাটকটি তাঁর ছদ্মনাম “কেনচিৎ পথিকেন” নামে প্রকাশ হয়। নীলচাষের আদর্শ জায়গাস্বরূপ বাংলায় ব্রিটিশরা নীলচাষের সূত্রপাত করে ও ভারতীয় নীলচাষীদের ওপর দৈহিক অত্যাচার,অর্থদন্ড,বিনা পারিশ্রমিকে বেগার খাটানো ইত্যাদিভাবে সম্মানহানি ও অত্যাচার করতে শুরু করে। যার ফলে অচিরেই অসন্তোষ ও বিদ্রোহ দেখা দেয়। দীনবন্ধু মিত্র তাঁর নীলদর্পন নাটকের পটভূমি হিসাবে এই অত্যাচারের কথাই তুলে ধরেন। এই নাটকে কিভাবে নীলকর সাহেবরা নীলচাষীদের দৈহিক পীড়ন করতেন, জোর করে দাদন দিয়ে নীলচাষ করতে বাধ্য করতেন,অবাধে গ্রেপ্তার করে কুটিতে বন্দি করে রাখতেন সেই চিত্রই ফুটে উঠেছে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ পাদ্রী জেমস লং দ্বারা নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হলে তাঁর জরিমানা  হয়। যদিও কালীপ্রসন্ন সিংহ জরিমানা মিটিয়ে দেন ও ১৮৭২ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নাট্যশালায় প্রথম অভিনীত নাটক হয় নীলদর্পন।

Keypoints
১৮৬০ সালে রচিত নীলদর্পন – ব্রিটিশদের নীলচাষের সূত্রপাত – ভারতীয় নীলচাষীদের উপর অত্যাচার এবং বিদ্রোহ – নাটকের পটভুমি নীলবিদ্রোহ – জেমস লং দ্বারা ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশ – প্রথম অভিনীত নাটক নীলদর্পন


আরো পড়ো → ইতিহাসের ধারণা প্রশ্ন উত্তর আলোচনা

ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন (LA)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৮]

১। উনিশ শতকের বাংলায় সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজ কিরূপ ভূমিকা নিয়েছিল? [মাধ্যমিক ১৮]
উত্তর- রাজা রামমোহন রায় কলকাতায় ১৮১৫ সালে একটি সমাজ সংস্কারমূলক সংগঠন প্রতিষ্টা করেন,যার নাম দেন আত্মীয় সভা,যা পরবর্তীকালে ১৮২৮ সালে ব্রাহ্মসভা নামে পরিচিত হয় ও কালক্রমে এই সংগঠনই ব্রাহ্ম সমাজ নামে সুপরিচিত হয়ে ওঠে। তৎকালীন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালীর এক বড় ধরনের ধর্মীয় আন্দোলনে পরিণত হয় এই ব্রাহ্ম সমাজ,যার মূল ভিত্তি ছিল একেশ্বরবাদ। ১৮৩৩ সালে রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। অধিক সংখ্যক বাঙালির মননে এই আন্দোলনকে পোঁছে দেওয়ার বিষয়ে আরও একজন মুখ্য ভূমিকা নেন,তিনি হলেন কেশব চন্দ্র সেন। কেশব চন্দ্র সেন ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম অবদান হিসাবে সমাজসংস্কারকে নতুনভাবে ও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যান। ব্রাহ্মসমাজ সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে যে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল সেগুলি নিম্নরূপ-

নারীদের অধিকারে প্রাধান্য – দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর,কেশব চন্দ্র সেন প্রমুখের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজ বিধবাদের পুনর্বিবাহ , বাল্যবিবাহ রোধ, পর্দাপ্রথার বিলুপ্তি সাধন, নারীদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি সংস্কারমূলক বিষয়গুলিতে জোর দেয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ – হিন্দু সমাজের চিরাচরিত ধর্মীয় কুসংস্কার, গোঁড়ামি ও জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মসমাজ সোচ্চার হয় ও সমস্ত সামাজিক কুসংস্কার রোধে সদর্থক ভূমিকা নেয়।

নিম্নবর্গের সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা– সমাজের নিম্নবর্গের মানুষদের প্রতি উন্নয়নের প্রচেষ্টায় ব্রাহ্মসমাজ ব্রতী হয় ও বিবিধ কার্যকলাপ গ্রহণ করে, যেমন- শ্রমিকদের উন্নয়ণ, মদ্যপান বিরোধী প্রচারকার্য পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদান।

তিন আইন পাশ– কার্যত ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলন ও সর্বাঙ্গিক প্রচেষ্টায় ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার তিন আইন পাশ করতে বাধ্য হয়। তিন আইন অনুসারে বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহের মত সামাজিক কুসংস্কার নিষিদ্ধ হয় ও অসবর্ণ বিবাহ ও বিধবা বিবাহ কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

মূল্যায়ন – রামমোহন রায়,দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর,দ্বারকানাথ ঠাকুর,কেশব চন্দ্র সেন প্রমুখের প্রচেষ্টায় ব্রাহ্ম সমাজের ঊনবিংশ শতকের ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কার আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল পর্যায়।

KeyPoints
রাজা রামমোহন রায় কলকাতায় ১৮১৫ ব্রাহ্মসমাজ তৈরি করেন – মূল ভিত্তি ছিল একেশ্বরবাদ – মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কেশব চন্দ্র সেনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা – নারীদের অধিকারে প্রাধান্য – জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ – নিম্নবর্গের সামাজিক উন্নয়ন – তিন আইন পাশ



২। বিদ্যাসাগর মহাশয় বিধবাবিবাহ আন্দোলনকে কিভাবে সফল করে তুলেছিলেন? এই আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা কি কি ছিল? [মাধ্যমিক ১৯]
উত্তর- আধুনিক ভারতবর্ষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বহুমুখী আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম হলো বিধবা বিবাহ আন্দোলন। নিপীড়িত মহিলাদের অবস্থার উন্নতির জন্য বিদ্যাসাগর অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই বিধবা বিবাহের লক্ষ্য ছিল বিধবা স্ত্রীদের পুনর্বিবাহে উৎসাহ প্রদান। ১৮৫৫ সাল থেকেই বিদ্যাসাগর জোরালোভাবে এই আন্দোলনকে সফল করে তুলতে উদ্যোগী হন ও ক্রমে বিধববিবাহ আইনকে বিধিসম্মত করার জন্য বাংলা, বোম্বাই, নাগপুর, মাদ্রাজ ও অন্যান্য এলাকায় ব্রিটিশ সরকারকে আবেদন পত্র দেওয়া হয় ও এই বিষয়ে বহু প্রবন্ধ ও পুস্তক রচনা করে জনমত গঠন করতে উদ্যোগী হন। ইতিপূর্বেই ১৮৫৪-৫৫ সালে তত্ববোধনী পত্রিকাতে ও তারও পূর্বে ১৮৫০ সালে সর্বশুভকরী পত্রিকায় বিধবাদের পুনর্বিবাহর প্রয়োজনীয়তা কতটা ও তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন ও ১৮৫৫ সালে বহু বিশিষ্টজনের সাক্ষর সহ বিধববিবাহ আইন প্রণয়নের প্রস্তাব সরকারের কাছে আবেদন রাখা হয়। অবশেষে ১৮৫৬ সাল এর ২৬ এ জুলাই তৎকালীন গভর্নর লর্ড ক্যানিং বিধববিবাহ আইন পাশ করেন ও কলকাতায় প্রথম ১৮৫৬ সালের ৭ই ডিসেম্বর উচ্চবর্ণের মধ্যে আইনসম্মত ভাবেই বিধবাবিবাহ কার্য সম্পন্ন হয় শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ও কালিমতি দেবীর মধ্যে।

সীমাবদ্ধতা– ১৮৫৬ সালএর বিধবা বিবাহ আইনের মাধ্যমে বিধবা বিবাহ স্বীকৃত হলেও তৎকালীন সমাজের কাছে বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি ও বিদ্যাসাগর এর ফলে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের রোষের সম্মুখীন হয়েছিলেন। সামাজিক সম্মতি এক্ষেত্রে বড়ো বাধা হয়ে দেখা দেয় ও পরবর্তী কয়েক দশকে মানুষের দারিদ্র্য, অশিক্ষা, ও পুরুষশাসিত সমাজের ফলে বিধবা বিবাহ নিষেধ হতে শুরু হয় ও নিম্নবর্ণের মানুষের মধ্যেও নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক লুসি ক্যারলের মতে আইনটি আসলে ছিল রক্ষণশীল চরিত্রের, ক্যারল আরো বলেছেন যে এই বিধবা স্ত্রীরা পুনরায় বিবাহ করলে মৃত স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হত, কেবল সতীস্বাধ্যি স্ত্রী রাই ব্রাহ্মন্য আদর্শ অনুযায়ী সম্পত্তি পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করা হয় ও পরোক্ষে ব্রাহ্মন্য আদর্শকেই সমর্থন করা হয়।

KeyPoints
১৮৫৫ সাল থেকেই আন্দোলন – বিধববিবাহ আইনকে বিধিসম্মত করার জন্য সরকারী আবেদন ও জনমত তৈরি করা – ১৮৫৬ সাল এর ২৬এ জুলাই আইন পাশ – আইন তৈরি হলেও সমাজের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না – রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ রুষ্ট হন – সীমাবদ্ধতা


আরো পড়ো → প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর 

৩। ভারতে বেসরকারি উদ্যোগে কিভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে? এই প্রসঙ্গে রাজা রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা কিরূপ ছিল?
উত্তর – ব্রিটিশ আমলে ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার সূচনার ব্যাপারে ব্রিটিশরা সফল হয়। তবে ব্রিটিশ সরকারের সাথে সাথে এদেশের বহু সমাজসংস্কারক ও জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব ও খ্রিস্টান মিশনারীরাও আধুনিক শিক্ষার প্রসারে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৭৯২ সালে চার্লস গ্রান্ট এদেশে ইংরেজি তথা পাশ্চাত্য শিক্ষার কথা বললেও কোম্পানির সরকার তার মান্যতা দেয়নি, ১৮১৩ সালের সনদ আইন অনুযায়ী ভারতীয় রাজস্ব থেকে আয়ের এক লক্ষ টাকা শিক্ষাখাতে খরচের নির্দেশ দেওয়া হয়,কিন্তু তাও ১৮২৩ পর্যন্ত ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা গৃহীত হয়নি। অবশেষে ১৮৩৫ সালের মেকলে মিনিট এই সমস্যার সমাধান করেন ও তখন থেকেই শুরু হয় সরকারী উদ্যোগে ইংরেজী তথা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার।তবে এই ১৮৩৫ এর পূর্বে কিছু ইউরোপীয় ব্যক্তিগণ ও খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে ও কিছু ভারতীয় বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে অর্থাৎ বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ইউরোপীয় যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ এই বেসরকারী উদ্যোগে সামিল হয়ে বেশ কয়েকটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। যেমন- ডেভিড ড্রামন্ড(ধর্মতলা একাডেমি), শেরবর্ন প্রমুখ। খ্রিস্টান মিশনারীদের মধ্যে অগ্রগণ্য ভূমিকা নেয় শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন ও আলেকজান্ডার ডাফ প্রতিষ্ঠিত স্কটিশ মিশন।

ভারতীয়দের মধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষার প্রসারে যারা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের মধ্যে রাধকান্ত দেব(১৭৮৪-১৮৬৭) অগ্রগণ্য। শোভাবাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নবকৃষ্ণ দেবের বংশধর রাধকান্ত দেব অল্প বয়সেই পাশ্চাত্য শিক্ষা লাভ করেন। ১৮১৭ সালে ডেভিড হেয়ার কতৃক প্রতিষ্ঠিত স্কুল বুক সোসাইটির সঙ্গে রাধকান্ত দেব যুক্ত হন, যে প্রতিষ্ঠানের মূল কার্য ছিল বিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য উপযোগী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বিতরণ। রাধকান্ত দেব চাইতেন ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার হোক প্রাচ্যবাদী শিক্ষা কাঠামোর অন্দরেই। ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন ও পরিচালন সমিতির সদস্য ছিলেন রাধকান্ত দেব। রাধকান্ত দেব নারীশিক্ষার সমর্থনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তাঁর অনুরোধে ১৮২২ সালে গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কারের প্রতিষ্ঠিত নারীশিক্ষা সংক্রান্ত পুস্তিকা প্রকাশ করেন যার নাম ‘স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক’। রাধকান্ত দেব ১৮৫৩ সালে ভারতের প্রথম জাতীয় কলেজ হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ স্থাপন করেন ও এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির সভাপতিও হন।

KeyPoints
আধুনিক শিক্ষার বিস্তারে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে এদেশের বহু সমাজসংস্কারক ও জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব ও খ্রিস্টান মিশনারীরাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে – শোভাবাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নবকৃষ্ণ দেবের বংশধর রাধকান্ত দেব – রাধকান্ত দেব চাইতেন ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার হোক প্রাচ্যবাদী শিক্ষা কাঠামোর অন্দরেই – নারীশিক্ষার সমর্থনে ভূমিকা – ১৮৫৩ সালে ভারতের প্রথম জাতীয় কলেজ হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ স্থাপন

আরো পড়ো → ইতিহাসের ধারণা প্রশ্ন উত্তর

WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাওয়ার জন্য –


আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।

নিয়মিত প্রশ্ন উত্তরের আপডেট পাও নিজের মোবাইলে 👇

wbporashona-whatsapp-channel