শ্রেণি – নবম | বিভাগ – ইতিহাস | অধ্যায় – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ (Napoleon)
নবম শ্রেণির ইতিহাস বিভাগ থেকে দ্বিতীয় অধ্যায় – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ থেকে প্রশ্ন উত্তর আলোচনা।
Table of Contents
সঠিক উত্তর নির্বাচন করো (MCQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 1]
১। ব্যাংক অভ্ ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন – ক) নেপোলিয়ন বোনাপার্ট খ) তুর্গো গ) মিরাবো ঘ) আবে সিয়েস
উত্তর – ব্যাংক অভ্ ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন – ক) নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
২। টিলজিটের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল- ক) ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে খ) ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে গ) ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে ঘ) ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে
উত্তর – টিলজিটের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল- খ) ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে।
৩। নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধের মূল লক্ষ্য ছিল- ক) রাশিয়া খ) আইবেরীয় উপদ্বীপ গ) প্রাশিয়া ঘ) ইংল্যান্ড
উত্তর – নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধের মূল লক্ষ্য ছিল- ঘ) ইংল্যান্ড।
৪। কনফেডারেশন অভ্খ দ্য রাইন গড়ে উঠেছিল – ক) 1806 খ্রিস্টাব্দে খ) 1808 খ্রিস্টাব্দে গ) 1809 খ্রিস্টাব্দে ঘ) 1807 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – কনফেডারেশন অভ্খ দ্য রাইন গড়ে উঠেছিল- ক) 1806 খ্রিস্টাব্দে।
৫। ‘কোড নেপোলিয়ন’ রচনা করেন – ক) 4 জনে খ) 5 জনে গ) 7 জনে ঘ) 10 জনে
উত্তর -‘কোড নেপোলিয়ন’ রচনা করেন- ক) 4 জনে।
৬। স্পেনের ক্ষতই ধবংস করেছে ______। ক) ফ্রান্সকে খ) নেপোলিয়নকে গ) ইংল্যান্ডকে ঘ) জাতীয় ঐক্যকে
উত্তর- স্পেনের ক্ষতই ধবংস করেছে খ) নেপোলিয়নকে।
৭। নেপোলিয়ন জন্মগ্রহণ করেন – ক) ইটালিতে খ) জার্মানিতে গ) কর্সিকা দ্বীপে ঘ) ফ্রান্সে
উত্তর- নেপোলিয়ন জন্মগ্রহণ করেন – গ) কর্সিকা দ্বীপে।
৮। পোড়ামাটির নীতি অনুসরণ করে- ক) ইংরেজরা খ) রুশরা গ) জার্মানরা ঘ) পোর্তুগিজরা
উত্তর- পোড়ামাটির নীতি অনুসরণ করে – খ) রুশরা।
৯। উপদ্বীপের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল – ক) 1808 খ্রিস্টাব্দে খ) 1813 খ্রিস্টাব্দে গ) 1809 খ্রিস্টাব্দে ঘ) 1818 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর- উপদ্বীপের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল- ক) 1808 খ্রিস্টাব্দে।
১০। নেপোলিয়নকে ‘মুক্তিদাতা’ রূপে সম্ভাষণ করেন – ক) রোমানরা খ) জার্মানিরা গ) ফরাসিরা ঘ) ইতালীয়রা
উত্তর- নেপোলিয়নকে ‘মুক্তিদাতা’ রূপে সম্ভাষণ করেন- গ) ফরাসিরা।
১১। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনের শেষ যুদ্ধ- ক) ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধ খ) উলমের যুদ্ধ গ) উপদ্বীপের যুদ্ধ ঘ) ওয়াটারলুর যুদ্ধ
উত্তর- নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনের শেষ যুদ্ধ – ঘ) ওয়াটারলুর যুদ্ধ।
১২। নেপোলিয়ন নীলনদের যুদ্ধে পরাজিত হন- ক) ব্রান্স উইকের কাছে খ) আউটরামের কাছে গ) ওয়েলিংটনের কাছে ঘ) নেলসনের কাছে
উত্তর- নেপোলিয়ন নিলনদের যুদ্ধে পরাজিত হন – ঘ) নেলসনের কাছে।
১৩। রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়ন গঠন করেন- ক) স্প্যানিশ আর্মাডা খ) গ্র্যান্ড আর্মি গ) আইবেরীয় আর্মি ঘ) কিংডম্ অব্ ওয়েস্টফেলিয়া
উত্তর- রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়ন গঠন করেন – খ) গ্র্যান্ড আর্মি।
১৪। ‘পোড়ামাটির নীতি’ অনুসরণ করে- ক) ইংরেজরা খ) রুশরা গ) জার্মানরা ঘ) পোর্তুগিজরা
উত্তর- ‘পোড়ামাটির নীতি’ অনুসরণ করে – খ) রুশরা।
১৫। ‘বিপ্লবের অগ্নিময় তরবারি’ বলা হত- ক) রুশোকে খ) নেপোলিয়নকে গ) মেরি আঁতোয়ানেতকে ঘ) রোবসপিয়রকে
উত্তর – ‘বিপ্লবের অগ্নিময় তরবারি’ বলা হত – খ) নেপোলিয়নকে।
আরো পড়ো → পৃথিবীর গতিসমূহ অধ্যায়ের প্রশ্ন – উত্তর
সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 2]
১। কোড নেপোলিয়ন কী?
উত্তর – ফ্রান্সের শাসনভার গ্রহণ করার পরে নেপোলিয়ন চারজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে নিয়ে একটি কমিশন গঠন করেন, চার বছরের পরিশ্রমের ফলে ফ্রান্সের একটি নতুন আইনবিধি সংকলিত হয়। ফ্রান্সের এই নতুন আইনবিধি কোড নেপোলিয়ন নামে খ্যাত।
২। কোড নেপোলিয়নের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
কোড নেপোলিয়নের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ছিল –
আইনের সাম্যতা – বিপ্লব পূর্ববর্তী অবস্থায় ফ্রান্সে আইনের সাম্যতা ছিল না, সারা দেশ জুড়ে ৩৬০টিরও বেশি ধারা প্রচলিত ছিল। কোড নেপোলিয়নের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বিচার ব্যবস্থা পূর্ণগঠন করা।
সামাজিক সাম্যতা – সমাজে বিশেষ পরিবার বা ব্যাক্তির বিশেষ অধিকার বিলোপ করে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা।
৩। কনফেডারেশন অভ্ দ্য রাইন কেন গঠন করা হয়েছিল?
উত্তর – জার্মানি আগে ৩০০টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত ছিল। সম্রাট নেপোলিয়ান জার্মানির ঐ ক্ষুদ্র রাজ্যগুলি ভেঙে ৩৯টি অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর রাজ্য গড়ে তোলেন, এরপর ঐ রাজ্যগুলি নিয়ে একটি রাষ্ট্র সমবায় বা কনফেডারেশন গঠন করেন। এর ফলে জার্মানির শাসন ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়।
৪। লিজিয়ন অব্ অনার কী?
উত্তর – ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন তাঁর শাসনকালে দেশের জনগণ এবং রাজকর্মচারিদের দেশের কাজে উৎসাহ দানের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ রাষ্ট্রীয় সন্মানের আয়োজন করেন, এই বিশেষ সন্মানকে লিজিয়ন অব্ অনার বলা হত । এটি পাঁচটি ডিগ্রিতে বিভক্ত ছিল।
৫। পোড়ামাটি নীতি বলতে কী বোঝো?
উত্তর – নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিজানের সময়, রাশিয়ার বাহিনী সংখ্যাগরিষ্ঠ নেপোলিয়নের বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে না গিয়ে ধীরে ধীরে পিছু হটতে থাকে এবং এই সময় তারা সকল জনপদ ও খাদ্যভাণ্ডার ধ্বংস করে দেয়। পরে নেপোলিয়নের বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে উপস্থিত হয়ে খাদ্য, পানীয় এবং বাসস্থানের অভাবে প্রবল সংকটের সম্মুখীন হয়। এই যুদ্ধনীতি ‘পোড়ামাটির নীতি’ নামে পরিচিত।
আরো পড়ো → কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি প্রশ্ন – উত্তর
৬। ট্রাফালগারের যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তরঃ ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে ট্রাফালগারের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে নেপোলিয়নের নেতৃত্বাধীন ফ্রান্সের পরাজয় ঘটে। এই যুদ্ধের ফলে নেপোলিয়নের ইউরোপে একাধিপত্যের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়।
৭। লিপজিগের যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?
উত্তর – ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে নেপোলিয়নের নেতৃত্বাধীন ফ্রান্স এবং ফ্রান্স বিরোধী শক্তি জোট অর্থাৎ প্রাশিয়া, রাশিয়া, সুইডেন, অষ্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের মধ্যে লিপজিগের যুদ্ধ হয়েছিল।
৮। লিপজিগের যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর – লিপজিগের যুদ্ধে নেপোলিয়ন নেতৃত্বাধীন ফ্রান্সের পরাজয় ঘটে। এই যুদ্ধের ফলে নেপোলিয়নের ইউরোপের সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। জার্মানি নেপোলিয়নের শাসনমুক্ত হয়, ওয়েস্টফিলিয়া, মেক্লেনবার্গ, কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন বিচ্ছিন্ন হয়, অষ্ট্রিয়া তার সাম্রাজ্যের অধিকাংশ ফিরে পায় এবং হল্যান্ড স্বাধীনতা লাভ করে।
৯। ওয়াটারলুর যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?
উত্তর – ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্স নেপোলিয়নের নেতৃত্বাধীন ফ্রান্স এবং ফ্রান্স বিরোধী শক্তি জোট অর্থাৎ প্রাশিয়া, রাশিয়া, সুইডেন, অষ্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের মধ্যে ওয়াটারলুর যুদ্ধ হয়েছিল। এটিই ছিল নেপোলিয়নের অন্তিম যুদ্ধ।
১০। ওয়াটারলুর যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর – ওয়াটারলুর যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে। এটিই ছিল তাঁর শেষ যুদ্ধ, যুদ্ধের পরে বিজয়ী শক্তিবর্গ নেপোলিয়নকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের পতনের পড়ে ইউরোপে ফ্রান্সের প্রভাব হ্রাস পায় এবং পরবর্তী সময়ে ভিয়েনা সন্মেলনের মাধ্যমে ইউরোপের সীমারেখার পুনর্গঠন হয়।
আরো পড়ো → All About a Dog Question Answer
দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (LA)
[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান 4]
১| কোড নেপোলিয়নের বৈশিষ্ট্য ও ত্রুটি।
উত্তর – ফ্রান্স সম্রাট নেপোলিয়নের শ্রেষ্ঠতম কীর্তি ‘কোড নেপোলিয়ন’। নেপোলিয়ন ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে কোড নেপোলিয়ন প্রণয়ন করেন।
কোড নেপোলিয়নের বৈশিষ্ট্য
- এর মাধ্যমে দেশের সকল নাগরিকের জন্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
- সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলোপ ঘটানো হয়।
- বিচার ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানো হয়।
- যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরীতে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।
- ব্যাক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- ধর্মীয়সহনশীলতার নীতি নেওয়া হয়।
কোড নেপোলিয়নের ত্রুটি
- সমাজে নারীর মর্যাদা হ্রাস পায়।
- পারিবারিক সম্পত্তির অধিকার থেকে স্ত্রীকে বঞ্চিত করা হয় এবং স্ত্রীর উপর স্বামীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
- শ্রমিকশ্রেণিকে আলাদাভাবে কোন অধিকার দেওয়া হয়না।
২| নেপোলিয়ন সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসী বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – ‘সাম্য’, ‘মৈত্রী’ এবং ‘স্বাধীনতা’ এই তিনটি আদর্শকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের বিপ্লব। বিপ্লবের সন্তান নেপোলিয়ন এই তিন আদর্শের মধ্যে ‘সাম্য’ ও ‘মৈত্রী’র আদর্শ মেনে চললেও, তিনি স্বাধীনতা সহ আরো বৈপ্লবিক আদর্শ ধ্বংস করেছিলেন। আমরা তার শাসনপদ্ধতি ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই সংঘাতের দিকগুলি বুঝতে পারবো।
রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা – স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রকে উচ্ছেদ করেই জন্ম নিয়েছিল ফরাসী বিপ্লব। কিন্তু শাসক নেপোলিয়ন নিজেকে ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে নিজেকে সম্রাট হিসাবে ঘোষণা করেন এবং নিজেই রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। শুধু নয়, নেপোলিয়ন যে সকল রাষ্ট্র অধিকার করেছিলেন, সেগুলিতেও রাষ্ট্রের শাসক হিসেবে নিজের পারিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তিদের স্থান দেন।
স্বাধীনতার আদর্শ ধ্বংস – নেপোলিয়ন তার সাম্রাজ্যকালে সাধারণ মানুষের বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেন এবং সাধারণ মানুষের উপর নানান কঠোর নিয়ম চাপিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, তিনি প্রাদেশিক আইনসভাগুলির ক্ষমতাও হরণ করেন।
শিক্ষানীতি – নেপোলিয়ন দেশের পাঠ্যসূচীতে পরিবর্তন করেন, তাঁর প্রবর্তিত শিক্ষানীতিতে ‘সম্রাট ও রাষ্ট্র’ বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ফলে নাগরিকরা সম্রাটের প্রতি একান্ত অনুগত হয়।
৩| মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা কি?
উত্তর – ইউরোপের অন্যতম দুটি শক্তি ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের মধ্যে দীর্ঘকালীন বিবাদ ছিল। ট্রাফালগারের যুদ্ধে পরাজয়ের পর ফ্রান্স সম্রাট নেপোলিয়নের ইংল্যান্ড দমনের স্বপ্নভঙ্গ হয়। তাই তিনি যুদ্ধে পরাজিত করতে না পেরে, অর্থনৈতিকভাবে ইংল্যান্ডকে ক্ষতিগ্রস্থ করার প্রচেষ্টা করেন।
সেই সময় ইংল্যান্ডের পণ্যের বিপুল চাহিদা ছিল সারা বিশ্ব জুড়ে এবং ইংল্যান্ডের বাণিজ্যও ছিল সুবিশাল। নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের এই বানিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে 1806 সালে ‘বার্লিন ডিক্রি’ নামক একটি অর্থনৈতিক অবরোধের আইন জারি করেন। এই আইনে বলা হয় ইউরোপ ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির বন্দরে বিট্রিশ জাহাজ প্রবেশ বা বিট্রিশ পণ্যবাহী জাহাজ প্রবেশ নিষিদ্ধ।
এই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশরা ‘অডার্স ইন কাউন্সিল’ – এর মাধ্যমে ব্রিটিশ এবং ব্রিটিশ মিত্র দেশগুলিতে ফ্রান্সের জাহাজ প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং প্রয়োজনে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়। এরপর 1807 সালে ‘মিলান ডিক্রির’ মাধ্যমে নেপোলিয়ন বিট্রিশ পণ্য ইউরোপের বন্দরে বাজেয়াপ্ত এবং নষ্ট করার নির্দেশ দেন।
নেপোলিয়নের এই ব্রিটিশ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পঙ্গু করার নীতিগুলিকে ‘মহাদেশীয় ব্যবস্থা’ বা ‘কন্টিনেন্টাল সিস্টেম’ বলা হয়। যদিও এই ভ্রান্ত নীতির ফলে ইউরোপের অর্থনীতিতে অকারণে সমস্যা দেখা দেয় এবং নেপোলিয়নের পতন তরান্বিত হয়।
৪| নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের কি কি কারণ ছিল?
উত্তর – নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের প্রধান কারণগুলি হল –
টিলসিটের সন্ধি – ফ্রান্স সম্রাট নেপোলিয়ন এবং রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডারের মধ্যে ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দে টিলসিটের সন্ধি সাক্ষরিত হয়। এর দুটি শর্ত ছিল – প্রথমত, রাশিয়া ফ্রান্স প্রণীত মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থায় যোগ দেবে এবং ফ্রান্স, রাশিয়াকে তুরস্ক আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সেনা সাহায্য প্রদান করবে। চুক্তির পরে রাশিয়া মহাদেশীয় ব্যবস্থায় যোগ দিলেও ফ্রান্স তুরস্ক আক্রমণের বিষয়ে শীতলতা দেখায়। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে শৈত্য বৃদ্ধি পায়।
কুটনৈতিক দূরত্ব – নানা বিধ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। এদের মধ্যে অন্যতম কিছু কারণ ছিল –
গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারস – জার্মানি পুনঃগঠনের সময় প্রাশিয়া অধিকৃত পোল্যান্ডের অংশ নিয়ে নেপোলিয়ন ‘গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারস রাষ্ট্র তৈরি করেছিলেন। পোল্যান্ডে কিছু অংশ রাশিয়ার দখলে ছিল, নতুন রাষ্ট্র ‘গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারস’ যাতে কোন সময় রাশিয়া অধিকৃত অংশের দাবী না জানায়, সেই মর্মে জার নেপোলিয়নের সমর্থন চাইলে, নেপোলিয়ন তা দিতে অস্বীকার করেন।
ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার ঘনিষ্ঠতা – নেপোলিয়ন, অস্ট্রিয়া রাজবংশের কন্যা মেরি লুইসা-কে বিবাহ করলে ফ্রান্স – অস্ট্রিয়া সম্পর্কের উন্নতি হয়। রাশিয়ার জার এতে আতঙ্কিত হন।
মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা – রাশিয়া, ফ্রান্স প্রণোদিত মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থায় যোগদান করেছিল, কিন্তু রাশিয়ার বাজারে ব্রিটিশ পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা ছিল। এর ফলে রাশিয়ার বাজারে দ্রব্যমূল্য অসম্ভব বৃদ্ধি পায়। ১৮১০ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ার জার ‘মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা’ মানতে অস্বীকার করেন এবং চুক্তি ভেঙে যায়।
এই সকল কূটনৈতিক দূরত্বের কারণে ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে নেপোলিয়ন বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন।
৫| শত দিবসের রাজত্ব বলতে কি বোঝ?
উত্তর – মিত্রজোটের কাছে পরাজিত হয়ে নেপোলিয়ন ফন্টেন ব্লু চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হয় এবং তাকে এলবা নামক একটি দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। এদিকে ফ্রান্সের পরিস্থিতি আবার অশান্ত হয়ে ওঠে, এর কারণ ছিল দুটো
প্রথমত, নেপোলিয়নের পরে ফ্রান্সের সিংহাসন দখল করেন অষ্টাদশ লুই এবং তার সাথে সাথেই ফ্রান্সের সামন্তপ্রভুরা আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। ফ্রান্সের জনগণের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
দ্বিতীয়ত, ভিয়েনা সম্মেলনের প্রধান দেশগুলির মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়।
সুযোগসন্ধানী নেপোলিয়ন এই জটিল পরিস্থিতির সুযোগ নেন। মাত্র ১০৫০ সৈন্য নিয়ে নেপোলিয়ন এলবা দ্বীপ ত্যাগ করে ফ্রান্সে ফিরে আসেন। ফ্রান্সের জনগণ নেপোলিয়নের প্রত্যাবর্তনকে অভ্যর্থনা জানায় এবং নেপোলিয়ন পুনরায় নিজেকে ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন।
তার এই শাসনকাল মাত্র ১০০ দিন স্থায়ী হয়েছিল, ওটারলুর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তাকে চিরকালের জন্য সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত হতে হয়। নেপোলিয়নের এই দ্বিতীয় শাসনকালকে শত দিবসের রাজত্বকাল বলা হয়।
আরো পড়ো → নবম শ্রেণির ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাবার জন্য –
- ফলো করো → WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো → YouTube চ্যানেল
- লাইক করো → Facebook পেইজ
- সাবস্ক্রাইব করো → টেলিগ্রাম চ্যানেল
আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।