সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর | Sirajuddaula Class 10 Question Answer | WBBSE

নিয়মিত প্রশ্ন উত্তরের আপডেট পাও নিজের মোবাইলে 👇

wb porashona.com whatsapp channel
sirajuddaula question answer
শ্রেণি – দশম | বিভাগ – বাংলা | অধ্যায় – সিরাজদ্দৌলা (Sirajuddaula)

দশম শ্রেণির বাংলা বিভাগ থেকে শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত সিরাজদ্দৌলা নাটক থেকে সম্পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা।

রচনাধর্মী উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন (LA)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৫]

১। আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। – বক্তা কাদের কাছে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন? তার অক্ষমতার কারণ কি?

উত্তর – এই উক্তির বক্তা নবাব সিরাজদ্দৌলা , তিনি ফরাসীদের প্রতিনিধি মসিয়ে লা-এর কাছে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন।

ফরাসীরা দীর্ঘদিন ধরে নবাব সিরাজদ্দৌলা শাসিত বাংলায় বাণিজ্য করছে; তারা কোন সময় নবাবের সাথে কোন বিরোধ করেনি এবং সর্বদা তাঁর কথা মেনে চলেছে। ইউরোপে ফরাসী এবং ইংরেজরা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। সাগরপারের যুদ্ধের আঁচ এসেছে বাংলায়; ইংরেজরা ফরাসীদের মূল ঘাটি চন্দননগর অধিগ্রহণ করেছে এবং ফরাসীদের সকল বাণিজ্য কুঠি ইংরেজদের ছেড়ে দেওয়া হোক এই দাবী জানিয়েছে। ফরাসীরা উচিৎ বিচারের আশায় নবাবের শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু নিরুপায় নবাব ফরাসীদের কাছে তাঁর অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন; তিনি তাদের জানিয়েছেন যে কলকাতা জয়ে এবং পূর্ণিয়ার যুদ্ধে তাঁর বহু লোকক্ষয় এবং অর্থব্যয় হয়েছে। এই অবস্থায় নবাব এবং তাঁর মন্ত্রীমণ্ডল নতুন কোন যুদ্ধের পক্ষপাতী নয়। তাই নবাব ফরাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও, তাঁর পক্ষে ফরাসীদের সাহায্য করা সম্ভব নয়।


পড়া মনে রাখার সেরা উপায়! ↓

WBP-to-the-point-banner-v1


২। আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে আমাকে শুধু এই আশ্বাস দিন’ – কাদের কাছে বক্তা ভিক্ষা চান? তিনি কি আশ্বাস প্রত্যাশা করেন? (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন)

উত্তর – আলোচ্য উক্তিটির বক্তা নবাব সিরাজদ্দৌলা, তিনি তাঁর প্রধান সেনাপতি মীরজাফর, অন্যান্য সেনাধক্ষগণ এবং সভাসদ যথা রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, দুর্লভরায় প্রভৃতি ব্যাক্তিদের এই কথা বলেছেন।

‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটাংশ থেকে আমরা জানতে পারি যে নবাবের শাসন পদ্ধতি নিয়ে তাঁর অধিকাংশ সেনাধক্ষ এবং সভাসদগণ অসন্তুষ্ট; তাঁরা নবাবকে সিংহাসন চ্যুত করতে চান। নবাব তাদের এই দুরভিসন্ধি সম্পর্কে অবহিত, কিন্তু তিনি নিরুপায়, কারণ বিশ্বের অন্যতম শক্তি ইংরেজবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলার সামনে আজ দুর্দিন উপস্থিত। এই পরিস্থিতিকে জয় করার জন্য নবাবের সেনাধক্ষগণ এবং সভাসদের সাহায্যের বিশেষ প্রয়োজন। তাই নবাব তাঁর সেনাধক্ষগণ এবং সভাসদের কাছে আশ্বাস চেয়েছেন যে তাঁরা যেন এই দুর্দিনে নবাবের সঙ্গ ত্যাগ না করেন এবং তাঁকে এই পরিস্থিতি অতিক্রম করার জন্য সাহায্য করেন।


আরো পড়ো → দশম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর আলোচনা

৩। ‘কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা’ – কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে? এ কথা বলার কারণ কি? (মাধ্যমিক ১৭)
উত্তর – আলোচ্য উক্তিটি নবাব সিরাজদ্দৌলা, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটস-এর উদ্দেশ্যে করেছেন।

নবাব সিরাজদ্দৌলা কলকাতা জয়ের পরে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আলিনগরের চুক্তি করেছিলেন। এর একটি শর্ত হিসাবে নবাবের দরবারে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে ওয়াটসকে স্থান দেওয়া হয়। ওয়াটসকে দরবারে স্থান দেবার প্রধান কারণ ছিল নবাবের সাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমন্বয় সাধন করা। কিন্তু এর পরিবর্তে ওয়াটস নবাবের সভা পার্ষদদের নবাবের বিরুদ্ধচারন করতে উৎসাহ দেয় এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় পরামর্শ দেয়। নবাব গুপ্তচর মারফৎ এই সংবাদ পেলে, ওয়াটস-এর ‘অভদ্র’ এবং ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে ওয়াটস-কে দরবার থেকে বহিষ্কার করেন।


মাধ্যমিকে নম্বর বাড়াবার সেরা উপায় ↓


৪। ‘বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়- মিলিত হিন্দু মুসলমানের মাতৃভুমি গুলবাগ এই বাংলা’ – কাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে? এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার কি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে? (মাধ্যমিক ১৮)

উত্তর – আলোচ্য উক্তিটির বক্তা নবাব সিরাজদ্দৌলা, তিনি তাঁর প্রধান সেনাপতি মীরজাফর, অন্যান্য সেনাধক্ষগণ এবং সভাসদ যথা রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, দুর্লভরায় প্রভৃতি ব্যাক্তিদের এই কথা বলেছেন।

‘গুলবাগ’ কথার অর্থ ফুলের বাগান। ফুলের বাগানে বিভিন্ন ফুল একসাথে সহাবস্থান করে, তারা একই মাটি থেকে খাদ্য সঞ্চয় করে, তাদের মধ্যে কোন বিভেদ থাকে না। নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলার চরিত্র বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি বলেছেন হিন্দু এবং মুসলমানের মাতৃভূমি এই বাংলা, যেখানে তারা একসাথে সহাবস্থান করে। তাই বাংলার দুর্দিনে ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে, নবাবের সেনাধক্ষগণ এবং সভাসদরা যেন তাকে সাহায্য করেন, এই অনুরোধ করেছেন। এই বক্ত্যবের মধ্য দিয়ে নবাব সিরাজদ্দৌল্লার ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা ফুটে উঠেছে।


সিরাজদ্দৌল্লা নাট্যাংশের আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে ↓


৫। ‘আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই – আছে শুধু প্রতিহিংসা।’ – কে, কার উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন? বক্তার প্রতিহিংসার কারণ কি?

উত্তর – আলোচ্য উক্তিটি সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশের অন্তর্গত, এই উক্তিটি নবাব সিরাজদ্দৌল্লার উদ্দেশ্যে সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগম করেছেন।

সিরাজের দাদু নবাব আলীবর্দী খান-এর জ্যেষ্ঠা কন্যা ছিলেন ঘসেটি বেগম বা মেহেরুন্নেসা। আত্মীয়তার অর্থে তিনি ছিলেন সিরাজের মাসি। নবাব আলীবর্দী সিরাজকে তাঁর উত্তরাধিকারী ঘোষণা করলে, ঘসেটি বেগম তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। উল্লেখ্য ঘসেটি বেগম ঢাকার নায়েব (শাসক)মুহম্মদ শাহমাত জং-এর সাথে বিবাহ সুত্রে আবন্ধ হেয়েছিলেন; নায়েব শাহমাত জং-এর মৃত্যুর পরে ঘসেটি বেগম বিপুল অর্থের অধিকারিণী হন। তিনি মতিঝিল প্রাসাদে বাস করতেন। সিরাজ নবাবী লাভ করলে, ঘসেটি সিরাজের পরিবর্তে সিরাজের ভাই শওকত জঙ্গ-কে সিংহাসনে বসাবার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সিরাজ শওকতকে হত্যা করে পূর্ণিয়া নিজের অধিকারে আনেন। এর কিছু পরে সিরাজ ঘসেটি বেগমকে মতিঝিল প্রাসাদ থেকে সরিয়ে নিজের প্রাসাদে নজরবন্দী করে রাখেন। তাই ঘসেটি বেগম বলেছেন যে, আজ তাঁর রাজ্য নেই এবং তাই তিনি রাজনীতির অংশীদারি নন, কেবলমাত্র প্রতিহিংসা চারন তাঁর উদ্দেশ্য।


আরো পড়ো → ভারতের নদনদী প্রশ্ন উত্তর আলোচনা

৬। এইবার হয় ত শেষ যুদ্ধ। – কোন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? বক্তা এই যুদ্ধকে শেষ যুদ্ধ বলেছেন কেন? (মাধ্যমিক ২০)

উত্তর – এখানে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলতে পলাশীর প্রাঙ্গণে হতে চলা বাংলা – বিহার – উড়িষ্যার নবাব সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে ইংরেজদের যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।

পনেরো মাস নবাবীর সময়ের মধ্যে নবাব সিরাজদ্দৌলা যুদ্ধ, গুপ্তষড়যন্ত্র, গুপ্তচর পরিচালনায় ক্লান্ত। তিনি জানেন যে নাবাবী পরিচালনার পদ্ধতিতে, তাঁর প্রধান সেনাপতি, অধিকাংশ সভাসদ এবং তাঁর পরিবার খুশি নয়। তাঁরা যেভাবে হোক সিরাজের পতন কামনা করেন, অপরদিকে অন্যতম ঔপনিবেশিক শক্তি ইংরেজরা, নবাবের অন্তঃকলহের সুযোগ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে; নবাবের দরবারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাহায্য নিয়ে তাঁরা বাংলার মসনদ দখল করতে চান। খুব শীঘ্রই তাঁরা পলাশীর প্রাঙ্গণে নবাবের বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। সকল দিক থেকে বিপর্যস্ত নবাবের গলায় ফুঁটে ওঠে হতাশা, তিনি বলেন – “যদি জয়ী হই, তাহলে হয়তো আর যুদ্ধে হবে না – আর যদি পরাজিত হই, তা হলে তো নয়ই!”। তাই নবাব, পলাশীর যুদ্ধকে সম্ভাব্য শেষ যুদ্ধ বলেছেন।

আরো পড়ো → সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা প্রশ্ন উত্তর

WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাবার জন্য –


আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।

পড়া মনে রাখার সেরা উপায় 👇

wb-porashona-to-the-point-ebook