অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর | Abhishek Question Answer | WBBSE Class 10 Bengali

নিয়মিত প্রশ্ন উত্তরের আপডেট পাও নিজের মোবাইলে 👇

wb porashona.com whatsapp channel
avishek-question-answer
শ্রেণি – দশম | বিভাগ – বাংলা | অধ্যায় – অভিষেক (Abhishek)

দশম শ্রেণির বাংলা বিভাগ থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্ত  রচিত অভিষেক কবিতা থেকে সম্পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা।

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো (MCQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]

১। ‘অভিষেক’ কবিতাটির কবি হলেন – (ক) নবীনচন্দ্র সেন (খ) মধূসূদন দত্ত (গ) হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় (ঘ) রঙ্গলাল গঙ্গোপাধ্যায়
উত্তর- ‘অভিষেক’ কবিতাটির কবি হলেন – (খ) মধূসূদন দত্ত।

২। ‘অভিষেক’ কবিতাটি কোন্‌ মূল গ্রন্থ থেকে নেওয়া? (ক) ব্রজাঙ্গনা কাব্য (খ) মেঘনাদ কাব্য (গ) তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (ঘ) বীরাঙ্গনা কাব্য
উত্তর- ‘অভিষেক’ কবিতাটি (খ) মেঘনাদ কাব্য থেকে নেওয়া।

৩। “রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী উত্তরিলা” – ‘রত্নাকর রত্নোত্তমা’ কে? – (ক) সরমা (খ) লক্ষ্মী (গ) সীতা (ঘ) প্রমীলা
উত্তর- “রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী উত্তরিলা” – ‘রত্নাকর রত্নোত্তমা’ (খ) লক্ষ্মী।

৪। “তবে শরে মরিয়া বাঁচিল।” – কে মরে বেঁচে উঠল? (ক) সুগ্রীব (খ) কুম্ভকর্ণ (গ) ভরত (ঘ) রাম
উত্তর- “তবে শরে মরিয়া বাঁচিল।” – (ঘ) রাম মরে বেঁচে উঠল।

৫। “যাও তুমি ত্বরা করি;” – কোথায় যাওয়ার কথা বলা হয়েছে? (ক) প্রমিলা-সকাশে (খ) গহন কাননে (গ) কালসমরে (ঘ) পবন-পথে
উত্তর- “যাও তুমি ত্বরা করি;” – (গ) কালসমরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।


পড়া মনে রাখার সেরা উপায়! ↓

WBP-to-the-point-banner-v1


৬। “_______ বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা,” – শূন্যস্থান পূরণ করো। – (ক) বৈরীদল (খ) কর্বুরদল (গ) বানর সেনা (ঘ) বামাদল
উত্তর- (ক) বৈরীদল বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা।

৭। ইন্দ্রজিতের স্ত্রীর নাম – (ক) নিকষা (খ) প্রমীলা (গ) ইন্দিরা (ঘ) সরমা
উত্তর- ইন্দ্রজিতের স্ত্রীর নাম (খ) প্রমীলা।

৮। ‘নাদিলা কর্বূরদল’ – ‘কর্বূর’ শব্দের অর্থ কী? (ক) সৈন্য (খ) যোদ্ধা (গ) রাক্ষস (ঘ) বানর
উত্তর- ‘নাদিলা কর্বূরদল’ – ‘কর্বূর’ শব্দের অর্থ (গ) রাক্ষস।

৯। “রাক্ষস – কুল – শেখর তুমি,” – এখানে কার কথা বলা হয়েছে? (ক) ইন্দ্রজিৎ (খ) রাবণ (গ) বীরবাহু (ঘ) রাম
উত্তর- “রাক্ষস – কুল – শেখর তুমি,” – এখানে (ক) ইন্দ্রজিৎ-এর কথা বলা হয়েছে।

১০। অভিষেক শীর্ষক কাব্যাংশটি মেঘনাদ বধ কাব্য-এর কোন সর্গ থেকে নেওয়া হয়েছে? (ক) প্রথম সর্গ (খ) তৃতীয় সর্গ (গ) নবম সর্গ (ঘ) পঞ্চম সর্গ
উত্তর- ‘অভিষেক’ শীর্ষক কাব্যাংশটি ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য-এর (ক) প্রথম সর্গ থেকে নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ো → আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর আলোচনা

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (VSAQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ১]

১। ‘অভিষেক’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর- প্রাচীনকালে রাজার, রাজ সিংহাসনলাভের সময়ের বিশেষ ধর্মানুষ্ঠানকে অভিষেক বলা হত।

২। “প্রণমিয়া, ধাত্রীর চরণে,” – ধাত্রীর প্রকৃত পরিচয় কী?
উত্তর- ইন্দ্রজিৎ এখানে ধাত্রী বলতে ‘প্রভাষা’-কে বুঝিয়েছেন, প্রভাষার প্রকৃত পরিচয় হল রাজলক্ষ্মী রমা।

৩। ‘ছদ্মবেশী অম্বুরাশি – সুতা’ কেন ইন্দ্রজিতের কাছে এসেছিলেন?
উত্তর- রামচন্দ্রের সাথে যুদ্ধে যখন ধীরে ধীরে লঙ্কাসেনা পরাজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং রাবণ সদ্য পুত্র বিরবাহু-কে হারিয়েছেন, এই সময়ে প্রভাষা-র ছদ্মবেশী রাজলক্ষ্মী রমা ইন্দ্রজিৎ-এর কাছে এসে তাকে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করার প্রচেষ্টা করেছিলেন।

৪। ‘ধরি পতি-কর- যুগ’ – পতির কর-যুগ ধরে উদ্দিষ্ট ব্যাক্তি কী বলেছিলেন?
উত্তর- ইন্দ্রজিতের স্ত্রী প্রমিলাদেবী তাঁর পতির হাত ধরে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে না যাবার অনুরোধ করেছিলেন।

৫। ‘শিঞ্জিনী আকর্ষি রোষে’, – ‘শিঞ্জিনী’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর- ‘শিঞ্জিনী’ শব্দের অর্থ ধনুকের ছিলা।


আরো পড়ো → আয়নীয় বন্ধন ও সমযোজী বন্ধন অধ্যায়ের প্রশ্ন – উত্তর

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৩]

১। “হা ধিক মোরে!”- বক্তা কেন নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছেন? উদ্ধৃত অংশে বক্তার চরিত্রের কোন দিক ফুটে উঠেছে? (১+২)
উত্তর – ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর ‘অভিষেক’ অংশ থেকে উদ্ধৃত পংক্তিটিতে ইন্দ্রজিতের এক মানসিক বিষাদ এবং ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছেন মধুসূদন দত্ত। প্রমোদকাননে বিলাসে মত্ত ইন্দ্রজিৎ যখন প্রভাষা রাক্ষসীরূপী রমার কাছে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ পেলেন, লঙ্কার এই দুঃসময়ে নিজেকে অসহায় মনে করেন তিনি। সঙ্কটকালে সম্মুখ সমরে না গিয়ে বিলাস-ব্যসনে মেতে আছেন তিনি, এই ভেবে ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছেন।

এই পংক্তির মধ্যে ইন্দ্রজিৎ যেভাবে নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছেন তাতে বীররসের উদ্রেক ঘটেছে। এর আগে অনেকবার সম্মুখ সমরে গিয়ে ক্লান্ত-অবসন্ন তিনি আর তাই নতুন করে জীবনের আনন্দ ভোগ করতে প্রমোদকাননে গিয়েছিলেন মেঘনাদ। সেখানে ছোটো ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে মেঘনাদ বিস্মিত এবং ক্রুদ্ধ হন। বীরদর্পে সমস্ত ফুলের মালা ছিঁড়ে ফেলে এই হত্যার প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠেন তিনি। স্বর্ণলঙ্কা যখন সঙ্কটাপন্ন, সেই দুঃসময়ে রমণীবিলাস সাজে না বীরের। ইন্দ্রজিতের প্রচণ্ড শৌর্য-তেজ-আত্মপ্রত্যয় তাই ফুটে ওঠে এই ধিক্কারে। একাধারে বীর এবং দেশপ্রেমিক ইন্দ্রজিতের এই বক্তব্যে এক আদর্শ ভ্রাতা, আদর্শ বীরের সমন্বয় লক্ষ করা যায়। আসন্ন বিপদের মুহূর্তে লঙ্কার ত্রাণকর্তা ইন্দ্রজিৎ হয়ে উঠেছেন ‘লঙ্কার পঙ্কজ রবি’, প্রতিশোধের কামনায় আর যুদ্ধের উন্মাদনায় দৃপ্ত এক নায়ক।

২। “হেনকালে তথা/দ্রুতগতি উতরিলা মেঘনাদ রথী।” – কোথায় কখন মেঘনাদ উপস্থিত হলেন? উপস্থিত হয়ে তিনি কি বলেছিলেন? (১+২)
উত্তর – বীরবাহু সম্মুখসমরে নিহত হলে শোকার্ত রাবণের হৃদয় অবসাদে নয়, ক্রোধে আর প্রতিশোধস্পৃহায় মত্ত হয়ে ওঠে। আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন রাবণ। রণবাদ্য বাজে লঙ্কার শিবিরে, হাতির বৃংহন-ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনিতে আকাশ বাতাস মন্দ্রিত হয়। পদাতিক, রথীর সমাবেশে লঙ্কার সোনার পতাকা যুদ্ধের নিশানা জানায়। এই প্রস্তুতির সময়েই মেঘনাদ এসে উপনীত হন রাবণের সমীপে।

পিতা রাবণের প্রতি প্রণত হয়ে মেঘনাদ জানান যে রামচন্দ্র পুনরুজ্জীবন লাভ করেছেন এবং সেই সংবাদ তাঁর অজানা নয়। এই রহস্যময় মায়ার খেলা মেঘনাদ বুঝতে পারেন না। তাই শত্রুর সংহার করতে তৎপর ইন্দ্রজিৎ প্রতিজ্ঞা করেন হয় তিনি রামকে বাণবিদ্ধ করবেন, নচেৎ বন্দী করে আনবেন রাবণের চরণে। এই জন্য পিতার কাছে সম্মুখ সমরে যাওয়ার অনুমতি চান মেঘনাদ।


মাধ্যমিকে নম্বর বাড়াবার সেরা উপায় ↓


৩।“সসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি” – কার সজ্জার কথা বলা হয়েছে? কারণসহ তার সজ্জার পরিচয় দাও। (১+২)
উত্তর – আলোচ্য পংক্তিতে রাক্ষসাধিপতি রাবণের কথা বলা হয়েছে।

রামচন্দ্রের সঙ্গে সমরে নিহত হয়েছেন রাবণের পুত্র বীরবাহু। মায়াবী পুরুষ রামের শক্তির কাছে একে একে পরাজিত হচ্ছেন লঙ্কার বীরেরা। লঙ্কার এমন দুর্যোগের দিনে শোকভার ত্যাগ করে রাবণ রণসাজে সজ্জিত হন, কারণ পুত্রহত্যার প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর তিনি। বীরবাহুর মৃত্যু বীরের মতোই গৌরবজনক রাবণের কাছে তাই তাঁর এই সৈন্যসহ রণসজ্জা একদিকে তাঁর স্বাদেশিকতা আর অন্যদিকে বীরত্ব-পৌরুষের ছবি ফুটিয়ে তোলে। রণমত্ত রাবণের আহ্বানে জড়ো হয় সমস্ত সৈন্য, হাতিশালা থেকে ছুটে আসে হাতি, রথ টেনে আনে ঘোড়া। সোনার মুকুট পরা পদাতিক সৈন্যের কোমরে শাণিত তলোয়ার ঝকঝক করে। শিবির জুড়ে উড়তে থাকে লঙ্কার পতাকা, রাবণের ধ্বজা। হাতির বৃংহন, ঘোড়ার হ্রেষা, সৈন্যদের হুঙ্কার আর অস্ত্রের ঝনৎকারে মেদিনী কেঁপে উঠলো। কবির ভাষায় –

“টলিল কনকলঙ্কা বীরপদভরে”

অভিষেক কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নের আলোচনা

রচনাধর্মী উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন (LA)

[প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নমান ৪]

১। “কেমনে ধরিবে প্রাণ তোমার বিরহে / এ অভাগী” বক্তা কে? মেঘনাদ ও তার কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা নিজের ভাষায় লেখ। (১+৪)

উত্তর – আলোচ্য পংক্তিটির বক্তা হলেন ইন্দ্রজিত-পত্নী প্রমীলা।

‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর প্রমীলা চরিত্র নির্মাণ মধুসূদনের এক অসামান্য কৃতিত্ব। রামায়ণের মূল কাহিনিতে এই চরিত্রটি কোথাও স্থান না পেলেও মেঘনাদের পত্নী হিসেবে শৈল্পিক মুনশিয়ানায় কবি প্রমীলাকে গড়ে তুলেছেন। কাব্যের প্রথম সর্গ ‘অভিষেক’-এ প্রমীলার আত্মপ্রকাশ – প্রমোদকানন ছেড়ে রণ-উন্মাদনায় মত্ত ইন্দ্রজিতের কাছে তিনি অনুনয় করেছেন। আসন্ন যুদ্ধের সম্ভাব্য দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে এবং স্বামীর প্রাণসংশয়ের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে প্রমীলা পথরোধ করেছেন ইন্দ্রজিতের, যেভাবে মত্ত হাতির পা আঁকড়ে ধরে তরুলতা ঠিক তেমনই যেন। প্রেমের শক্তিতে প্রমীলা জয় করেছেন মেঘনাদকে, তাই তো ইন্দ্রজিৎ বলেন –

“ইন্দ্রজিতে জিতি তুমি, সতি, / বেঁধেছ যে দৃঢ় বাঁধে, কে পারে খুলিতে”

প্রমীলা অনুযোগ জানান এই দুঃসময়ে স্বামীর বিহনে তিনি কিভাবে থাকবেন। গভীর অরণ্যে হাতি যেমন লতাগুল্মের শত বাঁধন উপেক্ষা করে এগিয়ে গেলেও সেই লতাকে পায়ে জড়িয়ে রাখে, তেমন করে সর্বদাই স্বামী মেঘনাদের কাছে থাকতে চেয়েছেন প্রমীলা। এ যেন সনাতন স্ত্রীর পতিপ্রাণতা। তবু তাঁর আকুতি থামে না – “তবে কেন তুমি, গুণনিধি, / ত্যজ কিঙ্করীরে আজি?”। অতঃপর প্রমীলাকে আশ্বস্ত করেন ইন্দ্রজিৎ এই বলে যে শীঘ্রই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অক্ষত ফিরবেন তিনি, প্রমীলার কল্যাণ কামনায় তাঁর কোনোরূপ অকল্যাণ হতে পারে না। রাঘবের সংহার করতে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার আগে তিনি বিদায় চেয়ে নেন প্রমীলার কাছে। স্বামী হিসেবে বীরহৃদয় ইন্দ্রজিৎকে নিয়ে প্রমীলার গর্বের অন্ত নেই, অন্ত নেই অগাধ প্রেমের – সে প্রেমে শ্রদ্ধা আছে, আকুতি আছে, ভক্তিও রয়েছে। মোহিতলাল মজুমদার বলছেন ‘প্রমীলা বীরাঙ্গনাও নয়, লজ্জাশীলা কুলবধূও নয়, সে পতিগতপ্রাণা প্রেমিকা নারী।…’ এই অংশে প্রমীলার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন ফুটে উঠেছে তেমনই ইন্দ্রজিতে প্রেমিকচিত্তের প্রকাশ ঘটেছে। ইন্দ্রজিৎ এবং প্রমীলার সম্পর্ক এখানে যেন গ্রিক কাব্য ‘হেক্টর বধ’-এর নায়ক হেক্টর এবং তাঁর পত্নী এণ্ডোমেকির অনুপ্রেরণায় প্রাণিত সনাতন নারী-পুরুষের দাম্পত্য।


পড়া মনে রাখার সেরা উপায়! ↓

WBP-to-the-point-banner-v1


২। “নমি পুত্র পিতার চরণে” –পুত্র এবং পিতার কথোপকথন সংক্ষেপে নিজের ভাষায় বর্ণনা করো। (৫)

উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য পংক্তিটিতে পিতা রাবণ এবং পুত্র ইন্দ্রজিতের কথোপকথনের একটি অংশবিশেষ। রামচন্দ্রকে সংহারের ইচ্ছায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইন্দ্রজিৎ এসে উপনীত হন পিতা রাবণের শিবিরে যেখানে রাবণ নিজেই প্রস্তুত হচ্ছেন প্রতি-আক্রমণের জন্য। ইন্দ্রজিৎ শুনেছেন যে রামচন্দ্র মায়ার বলে পুনরুজ্জীবন লাভ করেছেন। তাই তিনি পিতার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেছেন যেন তিনি নিজে শত্রুসংহার করে বা রামচন্দ্রকে বন্দী করে নিয়ে আসতে পারেন রাবণের পদতলে। অপরাজেয় ইন্দ্রজিৎ রাক্ষসকুলের গর্ব, এই দুঃসময়ে ইন্দ্রজিতই রক্ষোকুলের ভরসা। কিন্তু তাঁকে বারবার যুদ্ধে পাঠাতে মন চায় না রাবণের। অদৃষ্ট তাঁর প্রতি বিরূপ না হলে এমন অসম্ভব ঘটনা ঘটতে পারে না। রাবণের খেদ ঝরে পড়ে তাঁর উক্তিতে –

“কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে,

কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে?”

কিন্তু ইন্দ্রজিৎ বোঝেন পিতৃহৃদয়ের যন্ত্রণা। অতি তুচ্ছ রামকে ভয় না পেয়ে তিনি তাই নিজেই রণাঙ্গনে যেতে চান, পুত্র হিসেবে পিতার এই দুঃসময়ে সমরে না গেলে তা হবে কলঙ্কজনক। তাই তিনি অনুমতি চান রাবণের কাছে –

“ …দেহ আজ্ঞা মোরে

দেখিব এ বার বীর বাঁচে কি ঔষধে!”

ভাই কুম্ভকর্ণকে অকালে জাগ্রত করে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন রাবণ, সেও নিহত হল – আশঙ্কিত পিতার মতো রাবণ তাই নির্দেশ দেন যেন ইন্দ্রজিৎ রাত্রে নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সমাপন করেই যেন রণাঙ্গনে যান। অবশেষে বীর পুত্রকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করেন রাক্ষসাধিপতি রাবণ।

৩। কাব্যাংশে প্রাপ্ত রাবনের চরিত্রের বর্ণনা দাও।‘ (৫)

উত্তর – সমগ্র ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এ রাবণ অমিত শৌর্য-বীর্য-তেজ এবং পৌরুষের অধিকারী হয়েও নিয়তিপীড়িত – মধুসূদন নিজে যাকে বলেছেন ‘my greatest Ravana’ সেই রাবণের শোক, বিক্রম, বাৎসল্য একাধারে ফুটে উঠেছে কাব্যাংশে।

যুদ্ধে নিহত পুত্র বীরবাহুর শোকে জর্জরিত হয়েছেন রাবণ। আবার বীর পুত্রের দেশপ্রেমের গর্বে শোক ভুলে রণমত্ত হয়ে উঠেছেন তিনি। রাবণ বীর হলেও পুত্রশোকের জাগতিক দুঃখ তাঁকে কাতর করে তুলেছে। মাইকেলের রাবণ কূট রাক্ষস নয়, কাব্যাংশের রাবণ পুত্রশোকগ্রস্ত পিতা এবং প্রবলপ্রতাপ রাজা। তিনি নিজেই পুত্রহত্যার প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত হন কিন্তু ইন্দ্রজিৎ তাঁকে নিবৃত্ত করে ভাইয়ের হন্তারককে সংহার করার অনুমতি চান রাবণের কাছে। রামের মায়াবী শক্তিতে যুদ্ধে একে একে মারা গেছে রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণ, পুত্র বীরবাহু – আশঙ্কিত পিতার মতো তাই তিনি ইন্দ্রজিতকে যুদ্ধে পাঠাতে চান না। রামচন্দ্রের পুনরুজ্জীবনের মতো অভাবনীয় ঘটনায় রাবণ বীর হয়েও অদৃষ্ট তথা নিয়তির প্রাধান্য অনুভব করেছেন। তাই রাবণের খেদোক্তি শুনি আমরা –

“হায়, বিধি বাম মম প্রতি”

ইন্দ্রজিৎ যখন রাবণের কাছে যুদ্ধে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করেন, তখন লঙ্কার দুর্দিনে একমাত্র ভরসার পুত্রকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করেন তিনি। সব মিলিয়ে কাব্যাংশে বিন্দুতে সিন্ধুদর্শনের মতো রাবণের বীরত্বকে ছাপিয়ে উঠেছে তাঁর পিতৃহৃদয়ের শোক, নিয়তির ফেরে ভাগ্যহত হওয়ার হতাশা। রাবণের চরিত্রে মিলটনের ‘প্যারাডাইস লস্ট’ কাব্যের Satan বা শয়তানের প্রভাব রয়েছে এবং শয়তানের মতোই কাব্যাংশে রাবণ একাধারে শৌর্য-বীর্য-তেজ-দম্ভে পূর্ণ এবং স্নেহদূর্বল-শোকগ্রস্ত।

৪। অভিষেক’ কবিতা অবলম্বনে ইন্দ্রজিতের দেশপ্রেমবোধের পরিচয় দাও। (৫)

উত্তর – মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর কেন্দ্রে রয়েছেন ইন্দ্রজিৎ, কবির প্রিয় চরিত্র। কাব্যের মধ্যে তাঁকে বলছেন ‘লঙ্কার পঙ্কজ রবি’। রাক্ষসকুলের গৌরব ইন্দ্রজিতের প্রবল বীরত্ব এবং শৌর্য-তেজ আলোচ্য কাব্যাংশে ফুটে উঠেছে।

ছোটোভাই বীরবাহুর মৃত্যুতে ইন্দ্রজিতের মনে জেগে উঠেছে প্রবল প্রতিশোধের ইচ্ছা। তাই লঙ্কার শিবিরে পিতার কাছে উপনীত হয়ে তিনি নিজেই যুদ্ধযাত্রা করে শত্রু রামকে সংহারের অনুমতি চান। এর আগেও বহু যুদ্ধ করে ক্লান্ত মেঘনাদ প্রমোদকাননে অবসাদ কাটাতে গিয়েছিলেন এবং তখনই ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে উত্তেজিত মহাবলী ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকেন। তাঁর এই আত্মধিক্কারের মধ্যে লুকিয়ে আছে দেশপ্রেমিক, আদর্শ বীর এবং আদর্শ ভ্রাতার ধর্ম। সমস্ত ফুলের মালা, কুণ্ডল ছিন্ন করে ইন্দ্রজিৎ শীঘ্র পৌঁছে যান পিতার শিবিরে। দেশের এহেন দুঃসময়ে তাঁর এই বিলাস-ব্যসন মানায় না। বীরের ধর্ম যুদ্ধজয় এবং দেশরক্ষা আর তাই সেই মহান উদ্দেশ্যে প্রমোদকাননে তিনি বলে ওঠেন –

“এ কি সাজে আমারে, দশাননাত্মজ

আমি ইন্দ্রজিৎ? আন রথ ত্বরা করি;

ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।”

স্বদেশ তাঁর কাছে মায়ের মতো। সেই মায়ের বুকে যখন শত্রুর পদচারণা ঘটে তখন তা প্রতিকার না করে আত্মসুখে মজে থাকা বীরের ধর্ম নয়। তাই ইন্দ্রজিৎ প্রেয়সী প্রমীলার শত অনুনয় উপেক্ষা করে রনাঙ্গণে গিয়েছেন। তাঁর কাছে পত্নীপ্রেমের থেকেও বড়ো দেশপ্রেম। ছোটোভাই বীরবাহুর মৃত্যুতে ইন্দ্রজিতের মনে যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠেছে তা তাঁর স্বাজাত্যবোধের পরিচয় দেয়। পিতাকে বিরত করে তিনি নিজেই রামকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছেন। দু’বার রাঘবকে পরাজিত করেও জয়ী হননি মেঘনাদ তাই শেষবারের মত অনুমতি চেয়েছেন তিনি পিতার কাছে। সেনাপতি পদে ইন্দ্রজিতের অভিষেক ঘটে, শত্রুর পঙ্কিল হাত থেকে সোনার লঙ্কাকে মুক্ত করতে ইন্দ্রজিৎ বদ্ধপরিকর হন। রামের প্রতি তাঁর এই সংঘাত যেন দেশের স্বাধীনতার জন্য সংঘাত। অনেক সমালোচক মধুসূদনের এই কাব্যের মধ্যে কবির জাতীয়তাবোধের প্রকাশ খুঁজে পেয়েছেন এবং সেদিক থেকে রাবণ-ইন্দ্রজিতের মতো চরিত্রগুলি বিদ্রোহী পরাধীন ভারতবাসীর আদলে নির্মিত বলে অনুমান করেছেন। সমস্ত কাব্য জুড়েই ইন্দ্রজিতের দেশপ্রেম তাই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে, আলোচ্য কাব্যাংশে তার ক্ষুদ্র প্রকাশ আমরা লক্ষ করি।

আরো পড়ো → প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ প্রশ্ন – উত্তর আলোচনা

WBPorashona.com-এর পোস্ট আপডেট নিয়মিত পাবার জন্য –


আমাদের কাজ থেকে উপকৃত হলে এই লেখাটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।

পড়া মনে রাখার সেরা উপায় 👇

wb-porashona-to-the-point-ebook